কোরআন ও হাদিসের আলোকে পানির পবিত্রতা ও উপকারিতা

 

কোরআন ও হাদিসের আলোকে পানির পবিত্রতা ও উপকারিতা


পানির পবিত্রতা ও উপকারিতা: মহান আল্লাহ তায়ালা প্রাণীকুল ও জীব জগতকে পানির উপর নির্ভরশীল করেছেন। পবিত্র কোরআন পাকে পানির অস্তিত্বকে প্রাণীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কোরআন পাকে ইরশাদ হয়েছে, পানি দ্বারা আমরা সবকিছুর জীবনযাপন করি। 

পানি জীবনধারণের জন্য সর্বশ্রেষ্ট পানীয়। আল্লাহ পাক সোবহানুতায়ালা পানি হতেই সকল জীবকে সৃষ্টি করেছেন। পানি শরীরের অভ্যন্তরীণ ভুক্ত খাদ্যগুলোকে নরম ও সিক্ত রাখে, রক্ত নালিসমূহ রক্ত পরিবহনের উপযোগী রাখে। পানের উপযোগী পানির যেসব গুণাবলী থাকা দরকার।  তা নিম্নরুপঃ 

• পানির রং হবে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ।

• কখনো দুর্গন্ধযুক্ত হবে না ।

· পানি হালকা ও পরিষ্কার হতে হবে।

· পানির উৎস ভেজালহীন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে।

• এর উৎস গভীর হতে হবে।

বাতাস ও রৌদ্রের সংস্পর্শে আসতে হবে। সর্বাবস্থায় মাটির নিচে লুকানো অবস্থায় রাখা যাবে না ।

পানির উৎস আবদ্ধ থাকবে না বরং দ্রুতগতিতে প্রবাহমান হতে হবে।

· পানি প্রবাহমান হতে হবে যাতে ময়লা, আবর্জনা বহন করে অন্যত্র প্রেরণ করতে পারে।

· পানির উৎসের প্রবাহ পশ্চিম হতে পূর্ব অথবা উত্তর হতে দক্ষিণগামী হতে হবে।

পানির এসব বৈশিষ্ট্য নীল, ইউফ্রেটিস, সায়হান ও জায়হান নদীসমূহে পাওয়া যায় ।  ইউফ্রেটিস ও নীল নদী জান্নাতের নদী।

Table of Contents

পানির উপকারিতা


নির্মল সতেজ জীবাণুমুক্ত পানি সুস্থ্য ও অসুস্থ্য উভয় অবস্থায় উপকারী। সাধারণত ঠাণ্ডা পানি শরীরের জন্য উপকারী। খাদ্য গ্রহণের মাঝখানে অল্প অল্প পরিমাণে পানি পান থেকে বিরত থাকতে হবে।  খাদ্য খাওয়ার সময় বেশি পানি পান করা অনুচিত। খাওয়ার পরে পানি পান না করাই শ্রেয়।  তবে প্রয়োজনে অল্প পানি পান করা যেতে পারে। গরম পানি পান করলে পাকস্থলী স্ফীত হতে পারে। হাঁপানি, দাঁত ও মুখমণ্ডলের রোগে লবণসহ হালকা গরম পানি উপকারী। ঠাণ্ডা পানি মুখমণ্ডল, দাঁত, শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি রোগে ক্ষতিকর। সর্বোপরি শরীরের অভ্যন্তরীণ চাহিদার জন্য গরম পানি অপেক্ষা হালকা ঠাণ্ডা পানি বেশি উপকারী।

বৃষ্টির পানি

হযরত আনাস বিন মালেক (রা:) হতে বর্ণিত। একদা আমরা রাসূলে পাক (সা:) এর সঙ্গে ছিলাম। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। রাসূলে পাক (সা:) তার পবিত্র পাত্র মোবারকের বাইরের পরিধেয় বস্ত্র খুলে ফেললেন সে সময় পর্যন্ত যখন রাসূল (সা:) এর পবিত্র গায়ে বা গাত্র মোবারকে বৃষ্টির পানি পড়ছিল।  তিনি ইরশাদ করলেন, এ পানি একমাত্র এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে।

পানির পবিত্রতা ও উপকারিতা

বৃষ্টির পানি সর্বাপেক্ষা স্বচ্ছ, সুমিষ্ট ও জীবাণু মুক্ত। বৃষ্টির শুরুতে পতিত পানির সাথে আকাশে বিদ্যমান জীবাণু থাকার সম্ভাবনা থাকে।  তাই কিছুক্ষণ বৃষ্টির পর পানি সংগ্রহ করতে হয়। এ পানি পানের উপযোগী হয়। বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে নানাবিধ চর্মরোগ ভাল হয়।  গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবনসহ সবুজ বনবনানী, লতাপাতা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক রহমতের বৃষ্টি পতিত করার মাধমেই এ ধরণীকে বসবাসের উপযোগী করে তোলেন ।

সমুদ্রের পানি

হাদীসে বর্ণিত আছে, সমুদ্রের পানি বিশুদ্ধ এবং এর মৃত মাছ ভক্ষণের জন্য তোমাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক মানুষের উপকারের জন্য সমুদ্রের পানি লবণাক্ত করেছেন। সমুদ্রের পানি মিষ্টি ও সতেজ হলে কোন প্রাণী মৃত্যুর পর পচে যেত ও পৃথিবীর পরিবেশ দূষিত হত। পৃথিবীর পরিবেশকে বাসপোযোগী করার জন্য মহান আল্মহ সমুদ্রের পানিকে লবণাক্ত করে সৃষ্টি করেছেন।  সাধারত সমুদ্রের পানিতে গোসল করলে অনেক অসুস্থ রোগী ভাল হয় ।

সমুদ্রের পানি নিয়মিত পান করলে আমাশয়, ডায়রিয়া ভাল হয়। সমুদ্রের পানি বিশুদ্ধ করে পান করা যায়। এক্ষেত্রে পরিষ্কার জীবাণমুক্ত পশমী কাপড় দিয়ে পানির পাত্র ঢাকতে হবে। পানি বাষ্পাকারে পশমী কাপড়ে শোষিত হবে। পশমী কাপড়ে চাপ প্রয়োগ করে পানি সংগ্রহের পর পানের উপযোগী হবে।

পানি পান করার সুন্নতসমূহ

চুষে চুষে পানি পান করা সুন্নত।  রাসূল (সা:) ইরশাদ করেন, চুষে চুষে পানি পান কর, ঢক ঢক করে পানি পান করো না। জনৈক ব্যক্তি বলেন যে, একদা আমরা মরুভূমিতে গেলাম। প্রখর রোদে পিপাসায় কাতর হলাম। কিন্তু সেখানে পানি পাওয়া কষ্টকর ছিল। 

অনেক খোঁজাখুজির পর একটি বাড়ি পেলাম।  সেখানে পানি প্রার্থনা করলাম।  ভেতর থেকে এক বৃদ্ধ একটি মাটির পাত্রে পানি দিলেন। কিন্তু এর মধ্যে ভুসি ছড়িয়ে দিলেন। পিপাসায় প্রাণ ওষ্ঠাগত।  তাই ছোট ছোট ঢোক দিয়ে পানি পান করলাম ।

পরে বৃদ্ধকে ভূষির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দিলেন, আপনাদের প্রচন্ড পানির পিপাসা ছিল। পরিষ্কার পানি দিলে তৎক্ষণাৎ ঢক ঢক পান করতেন। ফলে কঠিন বিপদ ও কষ্টে পড়তেন। কারণ ইতোপূর্বে কয়েকজন লোক তীব্র পিপাসায় ঢক ঢক করে পানি পান করছিল। এর ফলে পানি শ্বাসনালিতে ঢুকে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হওয়ায় ভীষণ বিপদে পড়েছিল। পানি চুষে পান করলে সহজে গলার ভেতর প্রবেশ করে ও দাঁতের গোড়া পরিষ্কার হয়।

১. পানি দেখে পানকরা সুন্নত

রাসূল হজরত মোহাম্মদ (সা:) বলেছেন, সর্বদা দেখার পর পানি পান করবে। সচরাচর পানিতে এমন ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ থাকতে পারে, যা পেটের অভ্যন্তরে ঢুকে গিয়ে যকৃৎ, পাকস্থলী, প্লীহা ইত্যাদি অকার্যকর ও নষ্ট করে দিতে পারে। পানিতে এমন কিছু ক্ষুদে পোকা আছে যা পান করলে পানির সাথে পেটের ভেতর প্রবেশ করতে পারে ।

একদা পাকিস্তানের মুলতান শহরের নাশথার হাসপাতালে এক নবীন যুবকের অপারেশন করে পাকস্থলী থেকে একটি কেঁচো বের করা হয়। ডাক্তার বলেন যে, পানির সাথে এটি ভেতরে চলে গিয়েছে।  মহানবী (সা:) এর সকল সুন্নত সফলতা ও বিপদ মুক্তির পাথেয় ।

২.বসে পানি পান করা সুন্নত

বসা অবস্থায় পানি পান করলে পানি চাহিদামত দেহের সর্বত্র পৌঁছে যায়। চাহিদার তুলনায় বেশি পানি পান করলে শোধ রোগ হতে পারে। এ রোগে সমস্ত শরীর ফুলে যায় ।

৩. দাঁড়িয়ে পানি পান করা নিষেধ

মহানবী (সা:) দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। দন্ডায়মান অবস্থায় পানি পান করলে পাকস্থলী ও যকৃতে মারাত্মক রোগ হয় যা চিকিৎসকগণ নিরাময় করতে অপরাগ হন ।  দাঁড়িয়ে পানি পান করলে পা ফোলা রোগ হওয়ার ভয় থাকে। যার ফলে শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফুলে যেতে পারে।

৪. তিন শ্বাসে পানি পান সুন্নত

বহু সংখ্যক হাদীসে তিন শ্বাসে এবং কিছু হাদীসে দুই শ্বাসে পানি পান করার হুকুম দেয়া হয়েছে ।  (মামুলাতে নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিন শ্বাসে পানি পান না করলে শ্বাসনালিতে পানি ডুকে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে। চুষে চুষে ধীরে ধীরে পানি পান করলে বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা কম। পাকস্থলীতে পানি বেশি মাত্রায় প্রবেশ করলে বিভিন্ন রোগ হয়।  ডান দিক হতে পানির চাপ পড়লে যকৃৎ, বাম দিক হতে চাপ পড়লে নাড়িভুঁড়ি উল্টেপাল্টে যায়।  এভাবে নানা রকম ক্ষতি হয় ।

৫. খোলা পাত্রে পানি পান করা

মহানবী (সা:) সর্বদা পেয়ালায় পানি পান করতেন। সাধারণত ছোট ও সংকীর্ণ পাত্রে পানি পান করলে প্রশান্তি আসে না ।

৬. পানির পাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ করা নিষেধ

হাদীস শরীফে পানির পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় মহানবী (সা:) কত সূক্ষ্ম সতর্কতা অবলম্বন করতেন। এর কারণ পানির পাত্রে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে যে কোন মুহূর্তে পানি শ্বাসনালির ভেতর প্রবেশ করে শ্বাস আদানপ্রদানে বিঘ্ন ঘটাতে পারে ।

সকালে খালি পেটে পানি পানের উপকারিতা :

সকালে খালি পেটে পানি পানের বহু উপকারিতা রয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, যা আমরা অনেকেই জানিনা।  নিম্নে সকালে খালি পেটে পানি পানের উপকারিতা আলোচনা করা হলোঃ


১।  সকালে খালি পেটে পানি খেলে রক্তের দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায় এবং ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়।

২।  হজম প্রক্রিয়া সহায়তা করার জন্য সকালে অন্তত এক গ্লাস পানি খাওয়া উচিত।

৩।  সকালে খালি পেটে পানি পান করল্র মাংসপেশি ও কোষ গঠন দ্রুত হয়।

৪।  ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমাতে অবশ্যই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পানি পানের অভ্যাস করুন। এতে হজম ভাল হবে এবং শরীরে বাড়তি চর্বি জমে না।

৫। সকালে খালি পেটে পানি পানের উপকারিতা অন্যতম হচ্ছে বমি ভাব, গলার সমস্যা, মাসিকের সমস্যা, ডায়রিয়া, কিডনির সমস্যা, আথ্রাইটিস, মাথা ব্যথা ইত্যাদি অসুস্থতা রোধ করা।

৬।  শরীরে পানির মাত্রা কমে যাওয়া কারণে অনেক সময় সকালে মাথা ব্যথা হয়।  সকালে খালি পেটে পানি পান করলে  মাথার যন্ত্রণা দূর হয়।

 সূত্রঃ

বিশ্ব নবীর (সঃ) চিকিৎসা বিধান, ডাঃ একেএম শামীমূল আলম  

লোকমান হেকিমের হেকিমী চিকিৎসা, বিরাজ বৈদ্যনাথ সেন   


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন