কালো জিরার উপকারিতা

 

কালো জিরার উপকারিতা

কালোজিরার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা  আশ্চার্যজনক ভাবে অতুলনীয়, আর তা কালোজিরার রস/ তেলের মধ্যেই বিদ্যমান।  ফলে কালোজিরার তেল ব্যবহার ও সেবন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে এবং রোগ মুক্ত রাখে। কালো জিরার উপকারিতা সহ খাওয়ার সকল নিয়ম আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। কালোজিরা ছোট ও নরম গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।  উচ্চতায় সাধারণত ৫০.৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।  পত্রদণ্ডের উভয় দিকে যুগ্মপত্র হয়। পুষ্পদণ্ডের অগ্রভাগ থেকে সাদা, নীল ও ঈষৎ পীত বর্ণের ফুল হয়। ফল গোলাকার ও ফলগাত্রে বীজ কোষে ৫-৬টি লম্বালম্বি খাঁজের দাগ আছে। প্রত্যেক বীজ কোষে ত্রিকোণাকার কালো বর্ণের অনেক বীজ থাকে।

বাংলা নাম

কালোজিরা

ইংরেজি নাম

Black Cumin.

বৈজ্ঞানিক নাম

Nigella sativa

ইউনানি নাম

শুনীষ

আয়ুর্বেদিক নাম

কৃষ্ণজীরক

Table of Contents

কালোজিরার বিস্তার

দক্ষিণ ইউরোপ এ গাছের আদি বাসস্থান বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশে এর চাষ হয়।

কার্যকর জৈব রাসায়নিক উপাদানসমূহ

কালোজিরার বীজে রয়েছে ৪০% অনুদ্বায়ী ও অল্প পরিমাণ উদ্বায়ী তেল। ৪০% অনুদ্বায়ী তেলে আটটি ফ্যাটি এসিড রয়েছে। তন্মধ্যে চারটি সম্পৃক্ত এবং চারটি অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড। লিনোলেয়িক, অলেয়িক, স্টিয়ারিক, পামিটিক ও লিনোলেনিক এসিড কালোজিরার তেলের মূল উপাদান।  এছাড়া এর তেলে রয়েছে প্রোটিন, গ্লুটামিন এসিড, এসপারটিক এসিড, আরজিনিন, সিস্টিন ও মিথায়োনিন নামক এমিনো এসিড, নিগেলোন, তারপিন, কারভোন ও কারভিনের স্ফটিক। 

এর বীজে রয়েছে কুইনোন, নিগেলোন, স্যাপোনিন, স্যাপোজেনিন, ম্যালানথিজেনিন এবং ম্যালাথিন ও হেডেরাজেনিনের উপজাত। এর বীজ পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনোশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও কপারের এক আদর্শ উৎস। 

কালোজিরার ব্যবহার ও কালো জিরার উপকারিতা: 

আদিকালে ঔষধ তৈরিতে গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহৃত হত।  বর্তমানে নিত্য নতুন ওষুধ আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছে গাছের অনন্য ভূমিকা। গাছ মূলত সকল প্রকার ওষুধের মূলাধার। লোকজ ওষুধের উপর রচিত প্রাচীন গ্রন্থাবলীতে অসংখ্য গাছের ঔষধি গুণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।  


প্রাচীন গ্রন্থাবলীর বহুল আলোচিত ভেষজসমূহের মধ্যে কালোজিরা অন্যতম।  যুগ যুগ ধরে কালোজিরা সুগন্ধি মসলা, খাবারের পঁচন নিবারক, বিভিন্ন রোগ নিরাময়কারী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।  পবিত্র বাইবেলে একে রোগ নিরামক বলে অভিহিত করা হয়েছে। 


চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রিটাস ও প্লীনি মহাশক্তিধর এ ভেষজের ঔষধি গুণ বর্ণনা করেছেন।  আর হাদিস গ্রন্থে সর্ব রোগের শেফা বলে অভিহিত করা হয়েছে। এসব কারণে কালোজিরা ক্রমেই চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে। বিগত দু দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষণাগার ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে কালোজিরার বীজ ও তেলের ঔষধি গুণের উপর গবেষণা হচ্ছে।

কালো জিরার উপকারিতা
আধুনিক কালের গবেষণা হতে কালোজিরার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারক, এলার্জি, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক, প্রদাহ প্রতিরোধী, রোগজীবাণু প্রতিরোধক, টিউমার, ক্যান্সার ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী গুণ সম্পর্কে জানা যায় ।


কালো জিরার ঔষধি গুণাবলী ও কালো জিরার উপকারিতা 


টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধ:

বিগত দু দশক যাবৎ পরিচালিত অসংখ্য গবেষণা হতে জানা যায়, কালোজিরার তেল ও এর নির্যাসে রয়েছে টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধী ভূমিকা। টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধে কালোজিরার ভূমিকা বৈজ্ঞানিক তথ্যসহ নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো ।


ক্যান্সার কোষে বিষক্রিয়া হয়:

কালোজিরা তেল ও নির্যাসে রয়েছে থাইমোকুইনোন ও ডাইথাইমোকুইনোন যা ক্যান্সার কোষে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে ও কোষের ধ্বংস সাধন করে। এ উপাদান দুটো বিভিন্ন প্রকার ড্রাগ প্রতিরোধী ক্যান্সার কোষের মধ্যেও বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে এবং এগুলোকে ধ্বংস করতে পারে।


থাইমোকুইনোন ক্যান্সার কোষসমূহের কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াকে জি১ দশায় বন্ধ করে ও ক্যান্সার কোষসমূহের মৃত্যু ঘটায়। এ প্রক্রিয়ার শুরুর দিকে থাইডমোকুইনোন P531 P21 MRNA এর কার্যকারিতা বাড়ায় যা ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিকারী প্রোটিন Bc1-2 এর কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয়। ফলে ক্যান্সার কোষসমূহের স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। কালোজিরায় বিদ্যমান থাইমোকুইনোন ও ডাইথাইমাকুইনোন কেমোড্রাগের ন্যায় কাজ করলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই ।


লিপিডের পারঅক্সিডেশন কমায়:

ক্যান্সারের অন্যতম কারণ মানব দেহের অভ্যন্তরে লিপিডের পারঅক্সিডেশন। কালোজিরার তেল ও নির্যাস লিপিডের পারঅক্সিডেশন হ্রাস করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও ঝুঁকি কমায় ।


গুটাথিয়োনের উৎপাদন বাড়ায়: 

ক্যান্সারের গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেহাভ্যন্তরে লিপিডের পারঅক্সিডেশন হ্রাস করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও ঝুঁকি কমায়।


গ্লুটাথিয়োনের উৎপাদন বাড়ায়:

ক্যান্সারের গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেহের ভেতর ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিকেলের উপস্থিতি। এসব ফ্রি র‍্যাডিকেলসমূহকে রিঅ্যাকটিভ অক্সিজেন স্পেশিজ বলা হয়। আর এসব ফ্রি র‍্যাডিকেল আমাদের কোষাভ্যন্তরে থাকা ডিএনএয়ের পরিবর্তন সাধন করার মাধ্যমে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। কিন্তু কালোজিরার তেল ও এর নির্যাস এসব ফ্রি র‍্যাডিকেল ধ্বংসকারী শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট গুটাথিয়োনের উৎপাদন বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ।


যকৃৎকে আফলাটক্সিনের বিষক্রিয়া হতে রক্ষা করে:

আলফাটক্সিন এসপারজিলাস জাতীয় ছত্রাক সৃষ্ট এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ। বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য বিশেষত শস্য ও বাদাম দীর্ঘদিন গুদামজাত করলে এগুলোর উপর এসপারজিলাস জাতীয় ছত্রাক জন্মে। এসব খাদ্যদ্রব্যের উপরিভাগে আলফাটক্সিন জাতীয় বিষাক্ত বস্তু উৎপন্ন হয়। এ পর্যন্ত ১৮ প্রকার আলফাটক্সিন আবিষ্কৃত হয়েছে, তন্মধ্যে বি,, বিং, জি., ও জি, খুবই মারাত্বক। 


আলফাটক্সিন যকৃতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি, কোষীয় ও এন্টিবডি নির্ভর রোগ প্রতিরোধী শক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমনকি যকৃতে ক্যান্সারও সৃষ্টি করতে পারে। এসব বিষক্রিয়া নাশ করে মহামূল্যবান ভেষজ কালোজিরা। বিষাক্ত আলফাটক্সিনকে ধ্বংস ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে অল্প পরিমাণ কালোজিরার তেল। আধুনিক গবেষণা হতে জানা যায়, কালোজিরায় বিদ্যমান থাইমোকুইনোন, ডাইথাইমোকুইনোন, থাইমোহাইড্রোকুইনোন ও থাইমোল যৌগসমূহ মানুষের শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী আলফাটক্সিন ধ্বংসে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।  

গ্যাস্ট্রিক ও আলসার নিরাময়ে:

মানবদেহে জৈবিক নিয়মে বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের সময় ফ্রি র‍্যাডিকেল (অক্সিজেন, রি অ্যাকটিভ-অক্সিজেন স্পিশিজ) উৎপন্ন হয়। এসব ফ্রি র‍্যাডিকেল দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। দেহে উৎপন্ন এন্টিঅক্সিডেন্ট এসব ফ্রি র‍্যাডিকেলকে নিষ্ক্রিয় করে মানবদেহকে এগুলোর খারপ প্রভাব হতে মুক্ত রাখে। 


কিন্তু ভুল খাদ্যাভ্যাস ও খারাপ অভ্যাসের (ধূমপান, মদ্যপান, ভাজাপোড়া খাবার) জন্য ফ্রি র‍্যাডিকেল উৎপন্নের পরিমাণ বাড়ে। যা নিষ্ক্রিয় করতে প্রয়োজনীয় এন্টিঅক্সিডেন্ট দেহে উৎপন্ন হয় না। ফলে প্রতিনিয়ত দেহে ফ্রি র‍্যাডিকেলের পরিমাণ বাড়তে থাকে যা পাকস্থলীর মিউকোসা কোষসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কোষকলার ক্ষতি করতে পারে। 


এজন্য পাকস্থলীর আলসার হওয়ার প্রধান কারণ  ফ্রি র‍্যাডিকেল। প্রকৃতির অমূল্য দান কালোজিরার তেল ও এর নির্যাস দেহে শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট গ্লুটাথিয়োন ও উপকারী সুপার অক্সাইড ডিসমিউটেজের উৎপাদন বাড়ায় ও দেহে তৈরি অতিরিক্ত ফ্রি র‍্যাডিকেল ধ্বংস করে আলসার প্রতিরোধ করে।


ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ:

ম্যালেরিয়া প্লাজমোডিয়াম নামক পরজীবীর আক্রমণে সৃষ্ট এক প্রকার সংক্রামক ব্যাধি। বিশ্বে প্রতি বছর ৩-৫ মিলিয়ন মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং প্রায় এক মিলিয়নের বেশি মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। আর ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর হার পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি হয়।


বর্তমান বাজারে ক্লোরকুইনাইন নামে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী অনেক ঔষধ আছে। সাম্প্রতিক গবেষণা হতে জানা যায়, ম্যালেরিয়ার জীবাণুসমূহের মধ্যে ৫% জীবাণু এসব ঔষধের প্রতি প্রতিরোধক্ষম হয়ে গেছে। তাই ক্রমেই বাড়ছে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি। 


কালোজিরায় রয়েছে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী বিশেষ ক্ষমতা। সাম্প্রতিক গবেষণা হতে জানা যায়, কালোজিরায় বিদ্যমান এলকালয়েড ও ফেনলের যৌগসমূহ প্লাজমোডিয়াম জীবাণুর প্রোটিন উৎপাদন বন্ধ করার মাধ্যমে প্লাজমোডিয়ামের মৃত্যু ঘটিয়ে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ হতে মানুষকে রক্ষা করে।


জনৈক গবেষকের মতে, কালোজিরা ম্যালেরিয়ার জীবাণুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে ম্যাক্রোফেজ কোষ হতে নাইট্রিক অক্সাইডের নিঃসরণ বন্ধ করে দেয়। ম্যাক্রোফেজ মানবদেহের কোষীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গবেষকগণ বলেন, কালোজিরা মানবদেহের কোষীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ করলেও এন্টিবডি নির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অত্যন্ত শক্তিশালী ও সক্রিয় করে।


ফলে ম্যালেরিয়া জীবাণুর প্রতি এন্টিবডির হঠাৎ আক্রমণ ম্যালেরিয়া জীবাণু প্রতিহত করতে পারে না এবং মৃত্যুবরণ করে। এভাবে কালোজিরা ম্যালেরিয়ার প্রকোপ হতে মানবদেহকে রক্ষা করে ।


উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:

অসংখ্য গবেষণা হতে জানা যায়, কালোজিরায় বিদ্যমান উদ্বায়ী তেলে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।  তাই উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিরসনে কালোজিরার উদ্বায়ী তেল এক মহৌষধ ।


শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ:

আধুনিক গবেষণা হতে জানা যায়, শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায়ও কালোজিরা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরার উদ্বায়ী তেল হিস্টামিনের এন্টাগোনিস্ট হিসেবে কাজ করে। ফলে ব্রংকাসের সংকোচন প্রতিহত হয় এবং সংকুচিত হয়ে যাওয়া ব্রংকাসের প্রসারণ ঘটে।


বিভিন্ন রোগ জীবাণু প্রতিরোধঃ

কালোজিরার রয়েছে এন্টিমাইক্রোবিয়াল বা বিভিন্ন জীবাণু প্রতিরোধী ক্ষমতা। বিভিন্ন গবেষণা হতে জানা যায়, কালোজিরা তেল ও এর নির্যাস বিভিন্ন ড্রাগে প্রতিরোধক্ষম ব্যাকটেরিয়া যেমন- সিউডোমানাস, ড. কোলি, ক্যানডিডা স্টেফাইইলোকক্কাস প্রভৃতি প্রতিরোধ করতে পারে। তা বিভিন্ন প্রকার জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধে কালোজিরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

অন্যান্য কার্যাবলী: গবেষণা হতে জানা যায়, কালোজিরার তেল ও এর নির্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, পিত্তরসের উৎপাদন বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শোথ রোগ নিরাময়ে কার্যকর।  বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণেও কালোজিরা ব্যবহৃত হয়।

কালো জিরার লোকজ ব্যবহার ও কালো জিরার উপকারিতা 

বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় কালোজিরা প্রাচীন কাল হতেই ব্যবহৃত হচ্ছে। কালোজিরার কতিপয় লোকজ ব্যবহার নিম্নরুপঃ

মাসিক ঋতু:

অনেক নারী অনিয়মিত, স্বল্প অথবা অধিক স্রাবের জন্য কষ্ট পান। এ সমস্যায় ঈষদুষ্ণ পানিসহ সকালে ও বিকালে দু বার খেতে হবে। আরোগ্য না হলে পরপর দু তিন মাস একই নিয়মে খেতে হবে।


স্তন্যাল্পতা:

পেটে আমদোষ (শুকনো আম) থাকলে স্তন্য কমে যায়। সেক্ষেত্রে অল্প ভাজা কালোজির চূর্ণ ৫০০ মিলিগ্রাম ৭-৮ চা চামচ দুধ অথবা ১-২ চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রত্যহ সকালে এবং বিকালে খেতে হবে। এক সপ্তাহ খেলে ভাল ফললাভ হবে।

কালো জিরার উপকারিতা

বাধকদোষ:

জননগ্রন্থীতে রক্তবহ স্রোতের সমস্যা জনিত বাধকতা দেখা দিলে ৭০ মিলিগ্রাম অল্প ভাজা কালোজিরা গুড়ো সকালে ও সন্ধ্যায় কুসুম গরম পানিসহ খেতে হবে। মাসিক ঋতুতেও এটা খাওয়া যাবে। এর দ্বারা জননগ্রন্থীর ক্রিয়াশক্তি ফিরে আসবে। অন্তত ২-৩ মাসে এ নিয়মে খেতে হবে অথবা কালোজিরা ভর্তা দু বেলা এক চা চামচ করে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।


মাথায় সর্দি বসে গেলে:

কালোজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিলে এবং মিহি চূর্ণের নস্য নিলে শ্লেষ্মা তরল হয়ে ঝরে পড়বে।

চুলকানি: 

কালোজিরা তেল গায়ে মাখলে চুলকানি কমে ।

কালো জিরার ৩৬ স্বাস্থ্য উপকারিতা নিম্নে দেওয়া হলোঃ


০১।  স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি:

এক চা চামচ পুদিনাপাতার রস বা কমলার রস বা এক কাপ রঙ চায়ের সাথে এক চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার করে নিয়মিত সেব্য। যা দুশ্চিন্তা দূর করে। এছাড়া কালোজিরা মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে। 

কালোজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক। মস্তিস্কেও রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিও মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। কালোজিরা খেলে আমাদের দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিও হয়।  যা আমাদের স্মৃতি শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

০২।  মাথা ব্যথ্যা নিরাময়ে:

১/২ চা-চামচ কালোজিরার তেল মাথায় ভালোভাবে লাগাতে হবে এবং এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে তিনবার করে ২/৩ সপ্তাহ সেব্য।

০৩।  সর্দি সারাতে:

এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার সেব্য এবং মাথায় ও ঘাড়ের রোগ সেরে না যাওয়া পর্যন্ত মালিশ করতে হবে। এছাড়া এক চা চামচ কালোজিরার সঙ্গে তিন চা চামচ মধু ও দুই চা চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি দূর হয়।

সর্দি বসে গেলে কালোজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিন। একই সঙ্গে পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে কালিজিরা বেঁধে শুকতে থাকুন, শ্লেষ্মা ভাল হয়ে যাবে। আরো দ্রুত ফল পেতে বুকে ও পিঠে কালিজিরার তেল মালিশ করুন।

০৪।  বাতের ব্যথা দূরীকরণে:

আক্রান্ত স্থানে ধুয়ে পরিষ্কার করে তাতে মালিশ করে, এক চা-চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে দৈনিক ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ সেব্য।

০৫ ।  বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ সারাতে:

আক্রান্ত স্থান ধুয়ে পরিষ্কার করে তাতে মালিশ করে; এক চা-চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে দৈনিক ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ সেব্য ।

০৬।  হার্টের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে:

এক চা-চামচ কালোজিরার তেলসহ এক কাপ দুধ খেয়ে দৈনিক ২ বার করে ৪/৫ সপ্তাহ সেব্য এবং শুধু কালোজিরার তেল বুকে নিয়মিত মালিশ করতে হবে।

০৭।  ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে :

প্রতিদিন সকালে রসুনের দুটি কোষ চিবিয়ে খেয়ে এবং সমস্ত শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করে সূর্যের তাপে কমপক্ষে আধাঘন্টা অবস্থান করতে হবে এবং এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ প্রতি সপ্তাহে ২/৩ দিন সেব্য যা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখে। এছাড়া কালোজিরা বা কালোজিরা তেল বহুমূত্র রোগীদের রক্তের শর্করায় মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে।

০৮।  অর্শ রোগ নিরাময়ে :

এক চা-চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তেল চুর্ণ/তিলের তেল, এক চা-চামচ কালোজিরার তেলসহ প্রতিদিন খালি পেটে ২ সপ্তাহ সেব্য।

০৯।  শ্বাস কষ্ট বা হাঁপানি রোগ সারাতে :

যারা হাঁপানী বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য কালোজিরা অনেক বেশি উপকারী। প্রতিদিন কালোজিরা ভর্তা রাখুন খাদ্য তালিকায়। কালোজিরা হাঁপানি বা শ্বাস কষ্টজনিত সমস্যা উপশম হবে। এছাড়া এক কাপ চা-চামচ কালোজিরার তেল, এক কাপ দুধ বা রং চায়ের সাথে দৈনিক ৩ বার করে নিয়মিত সেব্য।

১০।  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে :

ডায়াবেটিস রোগ উপশমে বেশ কাজে লাগে কালোজিরা। এক চিমটি পরিমাণ কালিজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেয়ে দেখুন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া এক কাপ চা-চামচ কালোজিরার তেল, এক কাপ রং চা বা গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ২ বার করে নিয়মিত সেব্য।  যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে একশত ভাগ ফলপ্রসূ।

১১।  যৌন শক্তি বৃদ্ধির জন্য:

কালোজিরা নারী-পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন কালোজিরা খাবারের সাথে খেলে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করে। কালোজিরা যৌন ক্ষমতা বাড়ায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। এক চা-চামচ মাখন, এক চা-চামচ জাইতুন তেল সমপরিমাণ কালোজিরার তেল ও মধুসহ দৈনিক ৩ বার ৪/৫ সপ্তাহ সেব্য। তবে পুরানো কালোজিরা তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

১২।  অনিয়মিত মাসিক /মেহ প্রমেহ রোগের ক্ষেত্রে:

এক কাপ কাঁচা হলুদের রস বা সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে এক কাপ চা-চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার করে নিয়মিত সেব্য । যা শতভাগ কার্যকরী।

১৩।  দুগ্ধদান কারিণীমাদের দুধ বৃদ্ধির জন্য:

যেসব মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই, তাদের মহৌষধ কালোজিরা। মায়ের প্রতি রাতে শোয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন। মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এ সমস্যা সমাধানে কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। এছাড়া এক চা- চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দৈনিক ৩ বার করে নিয়মিত সেব্য; যা শতভাগ কার্যকরী।

কালো জিরার উপকারিতা

১৪।  ত্বককে রক্ষাঃ

আপনার ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বককে সুন্দর করে ও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে। মধু ও কালোজিরার পেষ্ট বানিয়ে ত্বকে লাগিয়ে আধাঘন্টা বা একঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন, এতে ত্বক উজ্জল হবে। যদি আপনার ব্রণের সমস্যা থাকে তাহলে আপেল সাইডার ভিনেগারের সাথে কালোজিরা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। নিয়মিত লাগালে ব্রণ দূর হবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য কালোজিরার গুড়া ও কালোজিরার তেলের সাথে তিলের তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

১৫।  গ্যাষ্টিক এবং আমাশয় নিরাময়ে:

এক চা চামচ তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে।৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ সেব্য।

১৬।  জন্ডিস বা লিভারের বিভিন্ন সমস্যার দূরীকরণে:

এক গ্লাস ত্রিফলার শরবতের সাথে এক চা-চামচ কালোজিরার তেল দিনে ৩ বার করে ৪/৫ সপ্তাহ সেব্য।

১৭।  রিউমেটিক এবং পিঠেব্যাথা দূর করার জন্য:

কালোজিরা থেকে যে তেল বের করা হয় তা আমাদের দেহে বাসা বাঁধা দীর্ঘমেয়াদী রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যাথা। কমাতে বেশ সাহায্য করে। এছাড়াও সাধারণভাবে কালোজিরা খেলে ও অনেক রোগের উপকার পাওয়া যায়।

১৮।  শিশুর দৈনিক ও মানসিক বৃদ্ধি করতে কালোজিরা:

দুই বছরের অধিক বয়সী শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করলে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। শিশুর মস্তিষ্কেও সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ও অনেক কাজ করে কালোজিরা। দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করা উচিত নয়। তবে বাহ্যিক ভাবে ব্যবহার করা যাবে।

১৯।  মাথা ব্যাথা দূর করতে:

মাথা ব্যাথায় কপালে, উভয় চিবুককে ও কানের পার্শ্ববর্তী স্থানে দৈনিক ৩/৪ বার কালোজিরা তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায় ।

২০।  স্বাস্থ্য ভাল রাখতে:

মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।

২১।  হজমের সমস্যা দূরীকরণে:

হজমে ও সমস্যায় এক-দুই চা-চামচ কালোজিরা বেটে পানির সঙ্গে খেতে থাকুন। এভাবে প্রতিদিন দু-তিনবার খেলে এক মাসের মধ্যে হজমশক্তি বেড়ে যাবে। পাশাপাশি পেট ফাঁপা ভাব ও দূর হবে।

২২। লিভারের সুরক্ষায়:

লিভারের সুরক্ষায় ভেষজটি অনন্য। লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী যাবতীয় বিষ ধ্বংস করে কালোজিরা।

২৩।  চুল পড়া বন্ধ করতে:

কালোজিরা খেয়ে যান, চুল পর্যাপ্ত পাবে। ফলে চুল পড়া বন্ধ হবে। আরো ফল পেতে চুলের গোড়ায় এর তেল মালিশ করতে থাকুন।

২৪।  দেহের সাধারণ উন্নতি :

নিয়মতি কালোজিরা সেবনে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গকে সতেজ করে ও সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যে ও উন্নতি সাধন করে।  এছাড়া অরুচি, পেটে ব্যাথা, ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, জ্বর, শরীর ব্যাথা, গলা ও দাঁতে ব্যথা, পুরাতন মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন, চুলপড়া, খোসপ্যাঁচড়া, শ্বেতি, দাদ, একজিমা, সর্দি, কাশি, হাঁপানিতে ও কালোজিরা অব্যর্থ ঔষধ হিসেবে কাজ করে।  


এটি মূত্র বর্ধক ও উচ্চ রক্তচাপ হ্রাসকারক, গ্যাস্টিক আলসার প্রতিরোধক, ভাইরাস প্রতিরোধক, টিউমার এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক, ব্যাকটেরিয়া এবং কৃমিনাশক, রক্তের স্বাভাবিকতা রক্ষাকারক, যকৃতের বিক্রিয়ানাশক এলার্জি প্রতিরোধক, বাত ব্যথা নাশক।


ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কালোজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মাথা ব্যথা, অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা-দুর্বলতা নিষ্ক্রিয়তা ও অলসতা, আহারে অরুচি, মস্তিস্ক শক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতে ও কালোজিরা উপযোগী। 


জ্বর, কফ, গায়ের ব্যথা দূর করার জন্য কালোজিরা যথেষ্ট উপকারী বন্ধু। এতে রয়েছে ক্ষুধা বাড়ানোর উপাদান। পেটের যাবতীয় রোগ জীবাণু ও গ্যাস দূর করে ক্ষুধা বাড়ায় এবং দেহের কাটা-ছেঁড়া শুকানোর জন্য কাজ করে। এছাড়া শরীরে সহজে ঘা, ফোড়া, সংক্রামক রোগ (ছোঁয়াচে রোগ) হয় না।  তিলের তেলের সঙ্গে কালোজিরা বাঁটা বা কালোজিরার তেল মিশিয়ে ফোঁড়াতে লাগালে ফোঁড়ার উপশম হয়।

২৫।  দাঁত ব্যথা দূরীকরণে:

দাঁতে ব্যাথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে, জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে।

২৬।  শান্তিপূর্ণ ঘুমের প্রয়োজন: তেল ব্যবহারে রাতভর প্রশান্তিপূর্ণ নিদ্ৰা হয় ।

২৭।  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কালোজিরা:

কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রতঙ্গ সতেজ থাকে। এত করে যে কোন জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তোলে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। ১ চামচ কালোজিরা অথবা কয়েক ফোঁটা কালোজিরার তেল ও ১ চামচ মধুসহ প্রতিদিন সেবন করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।

২৮।  চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে :

কালোজিরার তেল চুলের কোস ও ফলিকলকে চাঙ্গা করে ও শক্তিশালী করে যার ফলে নতুন চুল সৃষ্টি হয়।  এছাড়াও কালোজিরার তেল চুলের গোড়া শক্ত করে ও চুল পড়া কমায় ।

২৯।  কিডনীর পাথর :

২৫০ গ্রাম কালোজিরা ও সমপরিমাণ বিশুদ্ধ মধু। কালোজিরা উত্তমরূপে গুড়ো করে মধুর সাথে মিশ্রিত করে দুই চামচ মিশ্রণ আধাকাপ গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন আধাকাপ পান করতে হবে।  এটি  দিনে ২ বার ১৫ ফোঁটা সেবন করতে পারেন।

৩০।  চোখের ব্যাথা দুর করতে:

রাতে ঘুমোবার আগে চোখের উভয়পাশে ও ভুরুতে কালোজিরা তেল মালিশ করুন এবং এককাপ গাজরের রসের সাথে একমাস কালোজিরা তেল সেবন করুণ। নিয়মিত গাজর খেয়ে ও কালোজিরা টীংচার সেবন আর তেল মালিশে উপকার হবে।

৩১।  উচ্চ রক্তচাপঃ

যখনই গরম পানীয় বা চা পান করবেন তখনই কালোজিরা কোন না কোন ভাবে সাথে খাবেন। গরম খাদ্য বা ভাত খাওয়া সময় কালোজিরা ভর্তা খান। এ উভয় পদ্ধতির সাথে রসুনের তেল সাথে নেন। সারা দেহে রসুন তেল ও কালোজিরা তেল মালিশ করুন। কালোজিরা, নিম ও রসুনের তেল একসাথে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন। ভালো মনে করলে পুরাতন রোগীদের ক্ষেত্রে একাজটি ২/৩ দিন অন্তর ও করা যায়।

৩২।  ডায়রিয়াঃ

মুখে খাবার স্যালাইন ও হোমিও ওষুধের পাশাপাশি ১ কাপ দই ও বড় এক চামচ কালোজিরা তেল দিনে ২ বার ব্যবহার জন্য সকাল সন্ধ্যায় লেবুর রসের সাথে ১ চামচ কালোজিরা তেল পান করুন আর কালোজিরা নস্যি গ্রহণ করুন। কালোজিরা ও লেবুর টীংচার (অ্যাসেটিক অ্যাসিড) সংমিশ্রন করে দেয়া যেতে পারে।

৩৩।  স্নায়ুবিক উত্তেজনাঃ  কফির সাথে কালোজিরা সেবনে দূরীভূত হয়।

৩৪।  উরুসন্ধি প্রদাহঃ

স্থানটি ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়ে ৩ দিন সন্ধ্যায় আক্রান্ত স্থানে কালোজিরা তেল লাগান এবং পর দিন সকালে ধুয়ে নিন।

৩৫।  আঁচিল:

হেলেঞ্চা দিয়ে ঘষে কালোজিরা তেল সাবান হেলেঞ্চা মূল আরক মিশিয়ে নিলে ও হবে। সাথে খেতে দিন হোমিও ওষুধ।  মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।

৩৬. সর্তকতাঃ

গর্ভাবস্থায় ও দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবনকরা উচিত নয়। তবে বাহ্যিক ভাবে ব্যবহার করা যাবে।

উপসংহার

হযরত আবু সালামাহ (রা:) ও হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক (সা:) ইরশাদ করেন, তোমরা এই কালোজিরা ব্যবহার করবে, কেননা এতে একমাত্র মৃত্যু ব্যতিত সর্বরোগের শেফা রয়েছে। এ হাদীসের গুরুত্ব উপলব্ধি করে মডার্ণ হারবাল ফুড লি: দীর্ঘদিন যাবৎ কালোজিরা অয়েল, গার্লিক এন্ড কালোজিরা ট্যাবলেট এবং কালোজিরা সমৃদ্ধ পথ্য বাজারজাত করে আসছে। কলোজিরাসহ অন্যান্য ভেষজের মাধ্যমে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, এইড্‌সসহ অসংখ্য ভয়াবহ রোগ হতে মুক্ত করে মানুষকে রোগমুক্ত, সুস্থ ও সুন্দর দেহের অধিকারী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই অসংখ্য রোগ হতে মুক্ত ও সুস্থ্য থাকতে প্রতিদিন অনন্ত দু ফোঁটা কালোজিরার তেল খাওয়া দরকার।

তথ্য সূত্রঃ

বিশ্ব নবীর (সঃ) চিকিৎসা বিধান, ডাঃ একেএম শামীমূল আলম  

লোকমান হেকিমের হেকিমী চিকিৎসা, বিরাজ বৈদ্যনাথ সেন   

  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন