খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা: আজকের এই প্রবন্ধে আমরা খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যেখানে থাকবে খেজুরের পরিচিতি, খেজুরের প্রকার ও পুষ্টিগুণ, আজওয়াখেজুর হৃদরোগের মহৌষধ ,খেজুর ও কাঁকড়ী, খেজুরের কিছু ঔষধি গুণাগুণ, খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা ইত্যাদি। এটি একটি বিস্তারিত আলোচনা। এটি পড়লে আপনাকে খেজুর তথা খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার জন্য অন্য কিছু পড়া লাগবেনা ইনশাআল্লাহ্।
Table of Contents
খেজুরের পরিচিতি
নাম: খেজুর
ইংরেজি নাম: Date palm
বৈজ্ঞানিক নাম: Phoenix dactyliferaa Linn Phoenix
sylvestris rox
পরিবার: Palmae
খেজুর
গাছের আদি জন্মস্থান সৌদি আরব। এ গাছ ১০ হাজার বছরের পুরাতন। অনেক সৌদি আরব প্রবাসী
এ গাছ নিজ দেশে এনে চাষ শুরু করেছেন শুধুমাত্র ফলের জন্য। খেজুর সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। ফল, পাতা, ফুল, রস,
গাছ ও ফলের বীজ অনেক কাজে ব্যবহৃত হয়। ইসলামে
অন্যান্য ফলের তুলনায় খেজুরকে আলাদা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন শরীফে ২০
বার খেজুরের উল্লেখ আছে। সূরা মরিয়মে এর
উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে।
মরিয়ম যখন প্রসব বেদনায় কষ্ট পাচ্ছিলেন, তখন তিনি একটি খেজুর গাছের নিচে বসেছিলেন। তিনি গাছকে নড়তে বলেছিলেন এবং গাছ নড়ার ফলে যে খেজুর নিচে পড়েছিল তা তিনি খেয়েছিলেন এবং এতে তার ব্যথা উপশম হয়েছিল।
অধিকাংশ
সৌদি নারী প্রসব পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে তাঁর এ উদাহরণটি অনুসরণ করেন। খেজুর
জরায়ুর মাংসপেশিকে বিভিন্ন উপাদানের যোগান দিয়ে দ্রুত প্রসব হতে সাহায্য করে। এ
ফল প্রসব পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
মা
ও শিশুদের জন্য খেজুর খুব ভাল এবং পুষ্টিকর একটি খাবার। সৌদি শিশুরা দুধের পরে যে জিনিসটির
স্বাদ নেয় সেটা হল খেজুর।
নবীজীর
(সা:) প্রিয় ফল ছিল খেজুর। তিনি প্রতিদিন সকালে সাতটি খেজুর দিয়ে নাশতা করতেন।
নবীজী মোহাম্মদ (সা:) পবিত্র রমজান মাসে সকল মুসলমানদের খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার
করতে বলতেন। একদা তিনি বলেছিলেন, যদি কারো বাড়িতে অল্প কিছু খেজুর থাকে, তাহলে
তাকে গরীব বলা যাবে না ।
পবিত্র কোরআন শরীফ প্রথম লেখা হয়েছিল খেজুর গাছের পাতায়। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন,
فَابَتنا فيها حبا وعنَبا وَقَصْبا وزيتُونَا وَنَحْلا
অর্থ
: আমি জমিনে উৎপন্ন করেছি শস্য-দ্রাক্ষী, শাকসবজি, জয়তুন ও খেজুর বৃক্ষ । (সূরা
আবাসা, আয়াত ২৭)
আল্লাহপাক সূরা নাহলে খেজুর ও আঙ্গুরের কথা উল্লেখ করছেন।
وَمَنْ ثَمَرَات
النَّخْلِ والأَعْنَابِ تَتَّخنُونَ مِنْهُ سُكْرًا و رِزْقًا حَسَنًا
অর্থ:
খেজুর ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা সাকার ও উত্তম খাদ্য তৈরি কর। নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান
লোকদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে (সুরা: নাহল, আয়াত ৬৭)
এছাড়া সূরা আনআমের নিরানব্বই নম্বর এবং সূরা মরিয়মের তেইশ নম্বর আয়াতেও খেজুরের উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে।
খেজুরের প্রকার ও পুষ্টিগুণ
বিভিন্ন
প্রকারের খেজুর রয়েছে। এগুলোর রং, আকার, আকৃতি, স্বাদ এবং গুণগত মানে ভিন্নতা
পরিলক্ষিত হয়। আম্বরী উত্তম ধরনের খেজুর। বরণী, জাবী, জালী কালমাহ, শাকাবী,
আজওয়া ও সুখখাল ইত্যাদি খেজুরের শুধু বীচিই কাজে লাগে ৷ এছাড়া সবাখাল খেজুরের
মেজাজ উষ্ণ ও শুষ্ক প্রকৃতির। এটাকে বীচিহীন মনে করা হয়। আম্বর খেজুর আকারে বড়,
সুস্বাদু এবং দামী খেজুর। তামার খেজুরকে শুকনো খেজুর বলা হয় । রাসূলে পাক (সা:) এ খেজুর পছন্দ করতেন ।
১ টি খেজুরে কত ক্যালরিঃ ১ টি খেজুরে কত ক্যালরি
থাকে এটাক নির্ধারন করার জন্য ১০০ গ্রাম সাইজের একটি খেজুর নিতে হবে। একটি ১০০ গ্রাম সাইজের খেজুরে ২৭৫ ক্যালোরি থাকে। এছাড়াও
এতে থাকে শর্করা ৭৩.৫১ গ্রাম, পানি ২২.৫০ গ্রাম, আঁশ ৭.৫ গ্রাম, প্রোটিন ১.৯৭ গ্রাম,
লিপিড ০.৪৫ গ্রাম। এছাড়াও খেজুরে রয়েছে খনিজ
লবন, ভিটামিন, ও এমিনো এসিড।
আজওয়া খেজুরঃ
আজওয়া
খেজুরঃ খেজুরের মধ্যে আজওয়া খেজুর সর্বোত্তম। এটির যেমন রয়েছে
পুষ্টিগুণ, তেমনি আজওয়া খেজুরের
রয়েছে মহৌষধী গুণ। নিম্নে আজওয়া খেজুরের বিভিন্ন গুণ আলোকপাত করা
হলো।
আজওয়া খেজুর হৃদরোগের মহৌষধ
হযরত
সায়ীদ (রা:) বর্ণনা করেন, একদা আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসূলে পাক (সাঃ) আমাকে
দেখতে তশরীফ নিয়ে এলেন। তাঁর পবিত্র হাতের শীতলতা আমার অন্তর পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
অতঃপর রাসূলে আকরাম (সা:) ইরশাদ ফরমালেন, তুমি অন্তরে কষ্ট অনুভব করছ। তুমি হারেস
ইবনে কালদাহ সাকিফীর নিকট যাও। কারণ সে একজন চিকিৎসক। সে যেন মদীনার সাতটি আজওয়া
খেজুর নিয়ে বীজসহ পিষে তোমার মুখে ঢেলে দেয়। (আবু দাউদ, মিশকাত)
আজওয়া খেজুর বিষের মহৌষধ
এটা
মধ্যম আকৃতি বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এর ঘনত্ব মধ্যম ধরনের। বর্ণ কালচে। এ খেজুর
সম্পর্কে রাসূলে পাক (সা:) ইরশাদ ফরমাইয়াছেন,
وَالعَجْوَةُ من
الجَنَّة وهى شفاء مِّنَ السَّم
অর্থ:
আজওয়া জান্নাতের ফল। এর মধ্যে বিষের নিরাময় রয়েছে। (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ)
বুখারী
শরীফে বর্ণিত আছে,
مَنْ تَصَبَّحَ
كُلُّ يومٍ سَبعَ ثَمَرَات عَجوة لم يَضُرُّهُ فِي ذَلِكَ اليَوْمِ سَمَّ وَلَا سَحْرٍ
অর্থ: হযরত সাআদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (সা:) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন বিষ এবং যাদু তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী শরীফ)
বরণী খেজুর
হযরত
আবু সায়ীদ (রা:) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলে পাক (সা:) ইরশাদ করেন, তোমাদের
খেজুরগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম খেজুর হলো বরণী। এটা রোগ নিরাময় করে এবং এতে কোন
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। (মুসতাদরাকে হাকিম)
উক্ত
বর্ণনা একটি দীর্ঘ হাদিসের অংশ বিশেষ। পূর্ণ হাদীসের বিষয়গুলো নিম্নরুপ। একদা হজর
নামক স্থানে কিছু লোক একটি প্রতিনিধি দলের আকারে রাসূল, পাকের (সাঃ) নিকট উপস্থিত
হয়। কথা প্রসঙ্গে রাসূল পাক (সা:) তাদের এলাকার খেজুরের নামের বিস্তারিত বর্ণনা
করতে লাগলেন।
তখন
তাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা:) আপনার উপর আমার পিতামাতা
কোরবান হোক, আপনি যদি হজরে অর্থাৎ আমাদের এলাকায় জন্মগ্রহণ করতেন তথাপি এর চেয়ে
বেশি নাম জানতেন না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল
(সা:)।
তখন রাসূল (সা:) বললেন, আমার সামনে এইমাত্র তোমাদের দেশের সমস্ত ভূখণ্ড তুলে ধরা হয়েছে এবং আমি এর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত দেখে নিয়েছি। তাই বুঝতে পারলাম, তোমাদের এলাকায় খেজুরের মধ্যে বরণী খেজুরই সর্বোত্তম খেজুর। এটা রোগ নিরাময় করে এবং এতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না ।
বরণী খেজুরের পরিচিতি
এ
খেজুর কালো নয়। সামান্য লালিমা মিশ্রিত কালো রঙের হয়ে থাকে। এর আকার অন্যান্য
খেজুর অপেক্ষা বড় ও খুবই মিষ্টি স্বাদযুক্ত। শাঁস অধিক এবং বীচি ছোট হয়। এ কারণে
সবাই এ খেজুর পছন্দ করে। রাসূলে পাক (সা:) বরণী খেজুরকে রোগের ঔষধ হিসেবে
আখ্যায়িত করেছেন।
রাসূলে পাক (সা:) হাসীস খেজুর পছন্দ করতেন
মা আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলে পাক (সা:) হাসীস পছন্দ করতেন। হাসীস খেজুর, মাখন ও জমাট দই এ তিনটি উপাদানযোগে প্রস্তুত করা হয়। এটা শারীরিক, মানসিক ও যৌনশক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। খেজুরের সাথে কালোজিরা, তিল ও রসুনের ব্যবহার যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে।
সর্বোপরি
খেজুর বিশ্বের একটি নন্দিত ফল। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ফলটি অতি গুরুত্বের সাথে
পুষ্টিকর ফলের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্য (যেমন সিরকা) হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।
খেজুর ব্যতিত রমজান মাসে ইফতারী অসমাপ্ত রয়ে যায়।
খেজুর ও কাঁকড়ী
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে পাক (সা:) কে তাজা
খেজুর এবং কাঁকড়ী একত্রে খেতে দেখেছি। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)।
রাসূলে
পাক (সা:) এর খাওয়ার এ পদ্ধতি নিঃসন্দেহ বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত।
কাঁচা বা শুকনো খেজুরের মেজাজ, প্রকৃতি বা তাপমাত্রা গরম প্রকৃতির হয়ে থাকে।
অপরদিকে কাঁকড়ীকে আরবীতে কিসসা বলা হয়।
মূলত
কাঁকড়ী আর্দ্র ও শীতল প্রকৃতির হয়ে থাকে। এ কারণে রাসূলে পাক (সা: ) খেজুরের গরম
মেজাজকে সমতায় আনার জন্য এর সাথে শীতল, আর্দ্র মেজাজের খাদ্য কাঁকড়ী ফল সঙ্গে
খেতেন।
কাঁকড়ীর উপকারিতা
এটি
ফল ও সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটা পিপাসা, গরম, জ্বালাযন্ত্রণা ও রক্তের চাপ
ইত্যাদি হ্রাস করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্তমানে প্রসাব বর্ধক ঔষধ
ব্যবহার করা হয়। ফলে শরীর থেকে প্রসাবের মাধ্যমে সোডিয়াম, পটাশিয়াম,
ক্যালসিয়াম ইত্যাদি খনিজ উপাদান বের হয় এবং রক্তের চাপ কমে যায় । কাঁকড়ীও
প্রস্রাব বৃদ্ধির মাধ্যমে একইভাবে রক্তের চাপ কমায়। এছাড়া কাকড়ী দ্রুত হজম হয়।
(হায়াতে জিন্দিগী, ১১৪)
কাকড়ী
অন্তরে শীতলতা আনয়ন, প্রস্রাব তৈরি ও প্রস্রাবের জ্বালাযন্ত্রণা দূর করে।
মূত্রদ্বার দিয়ে পুঁজ, রক্ত নির্গত হওয়া বন্ধ করে। এটা মূত্রাশয়ের পাথর এবং
মূত্রথলির জন্য বিশেষ উপকারী । (কিতাবুল মুফরাদাত: খাওয়াসুল আদভিয়া, পৃষ্ঠা ২৭৮)
কাকড়ীর খাদ্য উপাদান
কাকড়ীতে
শতকরা ৭৬.৬ ভাগ পানি, ১-২ ভাগ আমিষ, ২-৩ ভাগ শ্বেতসার বিদ্যমান । এছাড়া ফ্যাটি
এসিড এবং পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, সালফার, লাইম ইত্যাদি খনিজ
লবণ বিদ্যমান। (সিহহাত আওর তন্দুরস্ত, পৃষ্ঠা ২০)
খেজুর ও মাখন
বুসর
সুলামী (রা:) এর দুই পুত্র আতিয়া (রা:)ও আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তাঁরা
বলেন, আমাদের নিকট রাসূলে পাক (সা:) তাশরীফ আনলেন। আমরা রাসূলে পাক (সা:) এর সামনে
তাজা খেজুর এবং মাখন রাখলাম। রাসূলে পাক (সা:) মাখন ও তাজা খেজুর পছন্দ করতেন।
(মিশকাত শরীফ, যাদুল মাআদ, ৩য় খণ্ড)
কিতাবুল মুফরাদের বর্ণনা
খেজুর উষ্ণ ও গরম খাদ্য। এতে প্রচুর খাদ্য উপাদান রয়েছে। এটা রক্ত উৎপাদনকারী, হজমশক্তি বর্ধক, যকৃৎ ও পাকস্থলীর শক্তি বর্ধক, কামশক্তি বর্ধক, মুখে রুচি বৃদ্ধিকারী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া মুখের অর্ধাঙ্গ রোগ, পক্ষাঘাত ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য খুবই উপকারী।
খেজুরের
বীচি পাতলা পায়খানা বন্ধ করে। পোড়া খেজুর বীচির চূর্ণ প্রবাহমান রক্ত বন্ধ ও
ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে। এর চূর্ণ মাজন হিসেবে ব্যবহার করলে দাঁত পরিষ্কার হয়।
(কিতাবলু মুফরাদাত: খাওয়াসুল আদভিয়া, পৃষ্ঠা ৩৩৮)।
খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে। শুষ্ক কাশি এবং হাঁপানি রোগে উপকারী (সিহহত ও জিন্দেগী, পৃষ্ঠা ১২৪)
খেজুর
ফুলের পরাগরেণু পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করে, শুক্রাণু বৃদ্ধি করে, ডিএনয়ের গুণগত
মান উন্নত করে, অণ্ডকোষের ওজন বাড়ায়। এক কথায়, প্রজননতন্ত্রের স্বাস্থ্য
সুনিশ্চিত করে। এটি পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত ।
প্রাণীর
উপর এক গবেষণা পরিচালিত হয়। প্রতি দলে ১০টি করে প্রাণী নিয়ে মোট ৫টি দলে ভাগ করে
তাদের খেজুর ফুলের পরাগরেণু যথাক্রমে ৩০, ৬০, ১২০ ও ২৪০ মিলিগ্রাম করে ৩৫ দিন
খাওয়ানো হয়। এর পর দেখা যায়, তাদের শুক্রাণুর সংখ্যা, চলন ক্ষমতা, গঠন এবং
ডিএনএয়ের গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
মিশরের
বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, খেজুর ফুলের পরাগরেণু গ্রহণে প্রজননতন্ত্রের উদ্দীপনা
বাড়ে। প্রাচীন মিশরে নারীদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে ফুলের রেণু ব্যবহৃত হত।
ফলের
সিরাপ গলা ব্যথা, ঠাণ্ডা, ব্রঙ্কিয়াল শ্লেষ্মা, জ্বর, মূত্রাশয়ের প্রদাহ,
গনোরিয়া, ইডিমা, যকৃৎ, পিঠব্যথা, মাথাব্যথা, কানব্যথা, কিডনি, গ্যাস্ট্রিক ও
পরিপাকতন্ত্রের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ।
ফলে
শর্করা বেশি থাকে। ফল বেকারি ও কনফেকশনারি শিল্পে জ্যাম প্রস্তুত করতে ব্যবহার করা
হয়। খেজুরের বীজ অক্সালিক এসিড প্রস্তুতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গাছের আঠা
ডায়রিয়া, জননেন্দ্রীয় ও মূত্রাশয়ের সমস্যায় ব্যবহৃত হয় । গাছের রস খুবই
পুষ্টিকর ও শীতলকারক হওয়ায় ঠাণ্ডা পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় । এছাড়া রস যক্ষা
রোগীদের পান করতে দেওয়া হয় ।
খেজুরের কিছু ঔষধি গুণাগুণ ও খেজুরের উপকারিতা:
১. খেজুর রুচি
বাড়াতে অতুলনীয়। অনেক বাচ্চারা খেতে চায় না, তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে মুখে
রুচি ফিরে আসবে।
২. খেজুরকে পানিতে
সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সে পানি খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাজা খেজুর নরম এবং মাংসল যা সহজেই হজম হয়।
৩. হৃদপিন্ডের
সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন খেজুর খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। খেজুর পুরোরাত পানিতে ভিজিয়ে
সকালে পিষে খাওয়ার অভ্যাস হার্টের রোগীর সুস্থতায় কাজ করে।
৪. খেজুরে প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান থাকায় দৃষ্টিশক্তিরসহ অনেক রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
৫. যদি কখনও দুর্বল
লাগে অথবা দেহে এনার্জির অভাব হয় তাহলে ঝটপট খেয়ে নিন খেজুর। তাৎক্ষণকিভাবে দেহে এনার্জি
সরবরাহের ক্ষেত্রে খেজুরের তুলনা নেই।
৬. ক্যান্সার
প্রতিরোধে খেজুর অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে।
৭. খেজুর খেলে
খাবার হজম সংক্রান্ত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। খেজুরের মধ্যে রয়েছে স্যলুবল
এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিড যা সহজে খাবার হজমে সহায়তা
করে।
৮. ফলে ওজন বেশি
বাড়ে না, সঠিক ওজনে দেহকে সুন্দর রাখা যায়।
৯. মুখের অর্ধাঙ্গ
রোগ, পক্ষঘাত এবং সব ধরণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী। খেজুর বিচিত্র
রোগ নিরাময় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
১০. পক্ষঘাত এবং
সব ধরণের অঙ্গপ্রতঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য খেজুর খুবই উপকারী।
১১. খেজুরের চূর্ণ
মাজন হিসেবে ব্যবহার করলে দাঁত পরিষ্কার হয়।
১২. পেটের ভেতরের
অঙ্গ-প্রতঙ্গের ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে খেজুর। এছাড়াও মুখগহ্বরের ক্যান্সার
রোধেও এ ফল বেশ কার্যকরী। গবেষণায় দেখা যায়, অ্যাবডোমিনাল ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা
করার ক্ষমতা রয়েছে খেজুরের।
১৩. প্রতিদিন
খেজুর খাওয়ার অভ্যাস রাতকানা রোগ ভালো করতেও সাহায্য করে থাকে।
১৪. খেজুরে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে আয়রণ। প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস দেহের আয়রণের অভাব পূরণ করে
এবং রক্তস্বল্পতা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। যাদের এ রক্তস্বল্পতার সমস্যা রয়েছে তাদের
প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। কারণ, রক্তস্বল্পতা ও শরীরের ক্ষয় রোধ করতে
খেজুরে রয়েছে বিশেষ গুণ ।
১৫. দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত? ৭টি । তবে ক্ষেত্র বিশেষ কম বেশি হতে পারে।
খেজুর খেলে কি বীর্য ঘন হয়ঃ
খেজুর খেলে কি বীর্য ঘন হয়-
এই প্রশ্নের উত্তর হ্যা। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, প্রোটিন, খনিজ
লবন, ভিটামিন, ও এমিনো এসিড । এই সকল উপাদান
বীর্য ঘন করে। যৌন সক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতাঃ
পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা
অপরিসীম। একজন পুরুষের সব চেয়ে কাংখিত বিষয়
হচ্ছে তার স্ত্রীকে সুখ দেওয়া। নিয়মিত খেজুর
খেলে একজন পুরুষের দ্রত বীর্ষ পাতের মতো ভয়ংকর রোগ দূর হয় যেটি কোরআন ও হাদিস দ্বারা
স্বীকৃত। তাই সুস্থ যৌন ও সমৃদ্ধ জীবনের জন্য
পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা অনস্বীকার্ষ।
খেজুরের অপকারিতাঃ
যেহেতু খেজুরে শর্করা বেশি
থাকে ,তাই ডায়বেটিস রোগির খেজুর না খাওয়া উত্তম।
ডায়বেটিস রোগি খেজুর খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
উপসংহার
খেজুর অতি পরিচিত একটি ফল। এর রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। এতে রয়েছে ১৮টি এমিনো এসিড, প্রচুর শক্তি, শর্করা, ভিটামিন ও মিনারেল। রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। এটি দেহে শক্তি যোগায়, হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে মায়ের যত্নে খেজুরের ভূমিকা অনন্য।
খেজুর ফলের পরাগরেণু পুরুষের শুক্রাণু বৃদ্ধিতে
কার্যকরী। এটা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত।
এছাড়া খেজুরের বীজ, আঠা ও পাতার রয়েছে অন্যান্য ব্যবহার। কোরআন ও হাদীসেও
খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। মহানবী (সা:) প্রতিদিন সকালে সাতটা খেজুরদিয়ে নাশতা করতেন। তাই এত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল অন্তত দুটি করে হলেও প্রতিদিন
আমাদের খাওয়া উচিত।
বিশ্ব নবীর (সঃ) চিকিৎসা বিধান, ডাঃ একেএম শামীমূল আলম
লোকমান হেকিমের হেকিমী চিকিৎসা, বিরাজ বৈদ্যনাথ সেন