মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

 

মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাঃ মধু সুপার ফুডের মধ্যে অন্যতম। মধু খাওয়ার উপকারিতা অনবদ্য ও অতুলনীয়।  প্রাচীনকাল থেকে সুস্বাস্থ্য, রুপ চর্চা, ও সেক্সে মধুর উপকারিতা সর্বজনবিদিত। আমাদের আজকের এই প্রবন্ধে মধু কি, মধুর উপাদান ও গঠন, প্রাচীনকাল থেকে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে মধুর ব্যবহার, খাটি মধু  চেনার উপায়, মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায়, মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়,লিঙ্গে ও যোনিতে মধুর ব্যবহার,মধু নষ্ট হলে বোঝার উপায়,ডায়াবেটিস হলে কি মধু খাওয়া যাবে কিনা ইত্যাদি সহ মধুর বিভিন্ন ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করর।  এই প্রবন্ধে পাঠের পর আপনারা মনের মধু সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উওর পাবেন ইনশাআল্লাহ।

Table of Contents

 মধু কি 


প্রাচীনকাল থেকেই সর্বরোগের শেফা হিসেবে মধুর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ব্যবহার সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। মানুষ সন্দেহাতীতভাবে এ মহৌষধ ব্যবহার করছে। শরীরে রোগ সৃষ্টির মূল কারণ সামগ্রিকতার অভাব। প্রাণ রসায়নগত বিশ্লেষণ বলে দেয়, কিছু ভুল খাবারদাবারে অভ্যস্ত হলে দেহে ভিটামিন, খনিজ লবণসহ নানাবিধ পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি তৈরি হয়।


সর্বোত্তম খাবার মধু শরীরের ঘাটতি পূরণে সক্ষম। প্রাথমিকভাবে মধু উচ্চশক্তি সম্পন্ন খাবার। এতে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরিন, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কপার, জিঙ্ক, সালফার, ফসফরাস, সিলিকা প্রভৃতি খনিজ লবণ আছে। আরো আছে বিভিন্ন ভিটামিন, যেমন থায়ামিন, রিবোফ্লোবিন, নিয়াসিন, প্যানটোথেনিক এসিড, পাইরিডক্সিন, অ্যাসকরবিক এসিড প্রভৃতি বিদ্যমান ।

 

মধুতে এনজাইমের উপস্থিতিই অন্য সকল মিষ্টি জাতীয় বস্তু থেকে এর অধিক গুরুত্বের কারণ। ইনভারটেজ, ডায়াস্টেজ, গ্লুকোজ, অক্সিডেজ প্রভৃতি মধুতে বিদ্যমান এনজাইমগুলোর অন্যতম। এরোবিক, এনেরোবিক, গ্রাম পজিটিভ ও গ্রাম নেগেটিভ প্রায় ৬০টি ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি ছাড়াও অ্যাসপারজিলাস, পেনিসিলিয়াম এবং অন্যান্য ছত্রাকের বিরুদ্ধে মধু দারুণ কার্যকর। বিভিন্ন প্রকার সংক্রমক ব্যাধি ছাড়াও হৃদরোগ, আথ্রাইটিস, টিউমার আলসার, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগে মধু মহৌষধ।

 

মধুর অবস্থা ও গুণাগুণ

 

মধু মৌমাছি দ্বারা ফুল থেকে আহরিত এবং পরিবর্তিত এক ঘন মিষ্টি জাতীয় পদার্থ। ফুলে বিদ্যমান অবস্থায় মধু সাধারণত পাতলা এবং সহজে পচনশীল হয়ে থাকে। কিন্তু আহরণের পর মৌমাছি এটাকে ঘন, উচ্চশক্তি সম্পন্ন ও সহজে পচে না এমন অবস্থায় পরিবর্তিত করে। 


ইউনাইটেড স্টেট্স ন্যাশনাল হানি বোর্ড ও অন্যান্য ন্যাশনাল ফুড রেগুলেশন অনুযায়ী মধু শর্তাধীনভাবে পানি বা অন্য মিষ্টি জাতীয় পদার্থের মিশ্রণ বিহীন এক বিশুদ্ধ অবস্থা। খাঁটি মধুর রং হালকা হলুদ থেকে গাঢ় লাল আম্বর পাথরের ন্যায় বা কালোর কাছাকাছি হতে পারে।

 

মধুতে বিদ্যমান ৮২.৪ শতাংশ শর্করা জাতীয় যৌগের মধ্যে ডেক্সট্রোজ এবং লেভুলোজ নামে দুটি মনোস্যাকরাইড (এক শর্করা) প্রধান। এছাড়াও এতে কমপক্ষে ২২ ধরনের অন্যান্য শর্করা বিদ্যমান।


এ পর্যন্ত শনাক্তকৃত দশ রকমের ডাইস্যাকারাইডগুলো (দ্বি শর্করা) হল সুক্রোজ, মল্টোজ, আইসো মল্টোজ, মন্টুলোজ, নাইজেরোজ, টিউরানোজ, কজিবিয়োজ, লামিনারাইবায়োজ, এ বি ট্রেহালোজ এবং জেন্টায়োবায়োজ। দশটি ট্রাইস্যাকারাইড (ত্রি শর্করা) হল মেলেজাইটোজ, ৩-এ আইসো ম্যান্টোসাইল গ্লুকোজ, মল্টোট্রায়োজ, ১-কেস্টোজ প্যানোজ ১-কেস্টোজ প্যানোজ, আইসোমল্টোট্রায়োজ, আরলোজ, থিয়ানডেরোজ, সেন্টোজ এবং আইসোপ্যানোজ । 

 

প্রতি ১০০ গ্রাম মধুতে বিদ্যামান পুষ্টিগুণ

 

পুষ্টি দ্রব্য

পরিমাণ

শর্করা

 

৩৮.৫ গ্রাম

৩১.০ গ্রাম

৭.২০ গ্রাম

১.৫০ গ্রাম

 

ফ্রোক্টোজ

গ্লুকোজ

মল্টোজ

সুক্রোজ

ভিটামিন

 

থায়ামিন

রিবোফ্লোবিন

নিয়াসিন

প্যানটোথেনিক এসিড

পাইরিডক্সিন

অ্যাসকরবিক এসিড

০.০০৬ মিলিগ্রাম

০.০৬ মিলিগ্রাম

০.৩৬ মিলিগ্রাম

০.১১ মিলিগ্রাম

০.৩২ মিলিগ্রাম

২.২-২.৪ মিলিগ্রাম

 

 

খনিজ লবণ

 

 

ক্যালসিয়াম

কপার

আয়রন

ম্যাগনেসিয়াম

ম্যাঙ্গানিজ

ফসফরাস

পটাশিয়াম

সোডিয়াম

জিঙ্ক

৪.৪.৯.২০ মিলিগ্রাম

.০০৩–০.১০ মিলিগ্রাম

.০৬-১.৫ মিলিগ্রাম

১.২-৩.৫০ মিলিগ্রাম

০.০২-০.৪ মিলিগ্রাম

১.৯-৬.৩০ মিলিগ্রাম

১৩.২-১৬.৮ মিলিগ্রাম

০-৭.৬০ মিলিগ্রাম

০.০৩-০.৪ মিলিগ্রাম

পানি

১৭.২% মিলিগ্রাম


এছাড়াও আইসোমল্টো টেট্রায়োজ এবং আইসোমল্টো পেন্টায়োজ নামে আরো দুটি শর্করা শনাক্ত করা গেছে। বিভিন্ন এসিড থাকায় মধু বৈশিষ্ট্যে এসিডিক এবং এর PH ৩.২-৪.৫। গুকোনিক মধুর প্রধান এসিড। এয়াড়া মধুতে আছে ফরমিক এসিড, এসিটিক এসিড, বিউটাইরিক এসিড, ল্যাকটিক, অক্সালিক, সাকসিনিক, টারটারিক, ম্যালেইক, ২ ও ৩ ফসফোগ্লাইসেরিক, এ ও বি গ্লাইসেরো ফসফেট এবং গ্লুকোজ-৬ ফসফেট প্রভৃতি।


মধুতে বিদ্যমান এমাইনো এসিডগুলো হল প্রোলিন, এলানিন, ফিনাইল এলানিন, টাইরোসিন, গুটামিক এসিড, লিউসিন এবং আইসোলিসিন ।


মধুতে ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান্য জীবাণু বিরোধী রাসায়নিক উপাদান গবেষকগণ শনাক্ত করেছেন । এগুলো হল পিনোসেন্ত্রিন, তারপিনস, বেনজাইল অ্যালকোহল ৩, ৫, ডাইমিথক্সি-৪, হাইড্রক্সিবেনজোয়িক এসিড (সাইরিঞ্জিক এসিড), মিথাইল ৩, ৫ ডাইমিথক্সি-৪, হাইড্রক্সি বেনজোয়েট (মিথাইল সাইরিনজেট) ৩, ৪, ৫ ট্রাইমিথক্সিবেনজোয়িক এসিড, ২-হাইড্রক্সি-৩-ফিনাইল প্রোপায়োনিক এসিড, ২ হাইড্রক্সি বেনজোয়িক এসিড এবং ১-৪ ডাইহাইড্রক্সিবেনজিন। এগুলোর সব কটি খুব অল্প পরিমাণে বিদ্যমান থাকলেই জীবাণুনাশক হিসেবে খুবই কার্যকর।

 

যুগে যুগে মধুর স্বীকৃতি

 

প্রাচীন পৌরানিক কাহিনী থেকে শুরু করে বিজ্ঞান ভিত্তিক আধুনিক চিকিৎসা ও গবেষণায় মধুর স্বীকৃতি সর্বজন বিদিত। প্রাচীন লেখনিগুলোতে মধুকে প্রশংসিত খাবার বলা হয়েছে । স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মধুকে অনন্য খাবার বলে প্রশংসা করা হয়েছে। 


গ্রীক পুরা কাহিনীতে মধুকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উপাদান বলা হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রিটাসের মতে, মধু একটি উত্তম কফ উৎসারক। তার মতে এটি শরীরে তাপ উৎপন্ন করে এবং আলসার ও ঘা শুকাতে বিশষেত ঠোঁটের কোণে ঘা, ব্রণ, ফোঁড়া প্রভৃতিতে কার্যকর। তিনি শ্বাসকষ্ট রোগীকে মধু খেতে দিতেন । এছাড়াও তাঁর মতে এটি একটি উত্তম রেচকও বটে ।

 

এরিস্টটলের (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০ অব্দে) মতে, মধু মলম বা প্রলেপ হিসেবে এবং চোখের যন্ত্রণায় মধু উপকারী। গ্রীক চিকিৎসাবিদ ডায়োসকোরাইড (৫০ খ্রিষ্টাব্দ) তাঁর প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম গ্রন্থ মেটিরিয়া মেডিকায় বলেছেন, রোদে পোড়ার ক্ষেত্রে এবং মুখের দাগের জন্য মধুকে উত্তম বলেছেন। পচা ঘা এবং অন্যান্য গভীর আলসার ছাড়াও গলার ও টনসিলের প্রদাহ ও কফের জন্য তিনি মধুকে কার্যকর বলেছেন। 

 

কর্নেলিয়াস সেলসাস তাঁর দি মেডিসিনা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, চিকিৎসক রোগের সুস্থতা আনয়নে অবশ্যই একটি দ্রুত, নিরাপদ এবং আরামদায়ক উপায়কে বেছে নেন এবং এগুলোর সব কটিই মধু দ্বারা সম্ভব। এ ছাড়া তিনি আরো বলেছেন, স্বাভাবিক অবস্থায় মধু একটি উত্তম রেচক এবং পানিতে ফুটিয়ে পান করলে ডায়রিয়ায় কার্যকর হয়ে থাকে।

 

এরিস্টোক্সেনাসের (খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০ অব্দ) মতে, যদি কেউ প্রতিদিন তার সকালের নাশতায় মধু, স্প্রিং অনিয়ন এবং রুটি খায়, সে পুরোজীবনে সর্ব প্রকার রোগ থেকে মুক্ত থাকবে।


প্রাচীন মিশরীয় পান্ডুলিপি মধুর গুণাগুণে ভরপুর। প্রাচীন এই জ্ঞান ভান্ডারের তথ্যানুযায়ী মধু বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ ক্ষতের প্রলেপ হিসবে দারুণ কার্যকর। এছাড়াও চোখের ব্যথায় মধু উত্তম। প্রাচীন মিশরে মধু ছাড়া খুব কম ঔষধই ছিল। মিশরীয় পাণ্ডুলিপি গ্রীসের মাধ্যমে ইউরোপে আসে । যেখানে আজও এর প্রচলন বিদ্যমান ।

 

খাঁটি মধু চেনার উপায়

মধ্যযুগের চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন রোগে মধু ব্যবহার করতেন। যেমন- পাকস্থলী ও অন্ত্রের রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্লাধিক্য, মুখের প্রদাহ, চোখের রোগ, চোখের পাতায় প্রদাহ, কর্নিয়ার ক্ষত, কর্নিয়ার অস্বচ্ছতা, স্নায়ুরোগ, পক্ষাঘাত, রক্তপ্রবাহের অবরুদ্ধতাজনিত হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ত্বকের রোগ, সংক্রমণজনিত ক্ষত, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি।

 

পশ্চিম আফ্রিকার অধিবাসীগণ মধুতে সুস্থকারী স্বর্গীয় শক্তি আছে বলে ধারণা করেন। ভারতের পদ্ম মধু চোখের রোগে ব্যবহৃত হয়। ঘানায় সংক্রমিত পায়ের ক্ষতে এবং নাইজেরিয়ায় কানের ব্যথা উপশমকারী হিসেবে মধু প্রচলিত। মালিতে হামের চিকিৎসা ও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কর্নিয়ার প্রতিরক্ষায় মধু ব্যবহৃত হয়।


নিউজিল্যান্ডে মেনুকা মধু এন্টিসেপটিক হিসেবে খুবই সমাদৃত। সারডিনিয়ায় স্ট্রবেরী গাছের মধুকে খুবই ওষধিগুণ সম্পন্ন বিবেচনা করা হয়। ইয়েমেনের জিরদিন উপত্যকার মধুর প্রচলন দুবাইতে খুব বেশি ।

 

প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থে মধুর কার্যকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে বলা আছে। বাইবেলে মধুর গুণাগুণ বর্ণিত আছে। ঔষধি গুণাগুণ, যাদুকরী প্রভাবের কারণে প্রাচীনকাল থেকেই মধুর প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের আস্থা অতি দৃঢ় ।  তারা মধুকে (বিশেষত পুরাতন মধুকে) কফ, ফুসফুসের সমস্যা, গ্যাস্ট্রাইটিস বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবহার করেন।

 

মধুর গুণাগুণ এবং কার্যকারিতা বিষয়ে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে পবিত্র কোরআন ও হাদীস পাকে। হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত আছে রাসূলে পাক (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মাসে তিন দিন সকালে মধু চেটে থাকে তার কোন বড় রোগ হবে না। (মিশকাত শরীফ)।

 

হযরত আবদুল্লা ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত আছে ‘রাসূলে আকরাম (সা:) ইরশাদ করেছেন, তোমরা দুটি শেফাদানকারী বস্তুকে নিজেদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নাও, একটি মধু (আহারের মধ্যে) এবং অপরটি আল কোরআন (কিতাব সমূহের মধ্যে)' (মিশকাত শরীফ)।

 

হযরত আবু নঈম, মা আয়েশা (রা:) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (সা:) এর নিকট মধু অত্যন্ত প্রিয় ও সুস্বাদু জিনিস ছিল।

 

হযরত নাফে (রা:) হতে বর্ণিত আছে, হযরত ইবনে ওমর (রা:) এর যখন কোন ফোঁড়া, পাচড়া অথবা শরীরে অন্য কোন কিছু বের হত তখন তিনি তার উপর মধু লাগিয়ে পবিত্র কোরআন পাকের মধু সম্পর্কিত আয়াতটি তেলাওয়াত করতেন।

অর্থ: এরপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার কর, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ কর। এর উদর হতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা নাহল: আয়াত ৬৯)

 

মধুর উপকারিতা

 

আধুনিক বিশ্বের বিজ্ঞানীরাও মধুকে সর্বরোগের ঔষধ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ভিন্ন ভিন্ন বস্তর সাথে মধুর ব্যবহার নানাবিধ রোগে কার্যকর। ১৯৯৫ সালের ১৭ জানুয়ারি কানাডার উইকলি ওয়ার্ল্ড নিউজ নামক ম্যাগাজিনে মধুর গুণাগুণ সম্পর্কে পশ্চিমা গবেষকগণের বেশ কিছু গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নানাবিধ রোগ সারাতে দারুচিনির সাথে মধুর ব্যবহার নিম্নরূপ ।

 

হৃদরোগ: প্রতিদিন সকালের নাশতায় জ্যাম জেলির পরিবর্তে মধু ও দারুচিনির ব্যবহার রোগীকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিমুক্ত রাখে।

 

আথ্রাইটিস: প্রতিদিন রাতে ও সকালে ২ চামচ মধু ও এক ছোট চা চামচ দারুচিনিগুড়া গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে দীর্ঘদিনের আথ্রাইটিসও ভাল হয়ে যাবে।

 

ক্যান্সার: পাকস্থলী ও হাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা দিনে তিন বার ১ চা চামচ মধুর সাথে ১ চা চামচ দারুচিনি গুড়া এক মাস খেলে ক্যান্সারের প্রকোপ থেকে মুক্ত থাকবেন বলে সম্প্রতি জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার গবেষকগণ জানিয়েছেন।

 

ওজন হ্রাস: সকালে নাশতার আধা ঘণ্টা পূর্বে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমাবার আধা ঘণ্টা পূর্বে মধু ও দারুচিনি গুড়া পানিতে ফুটিয়ে খেলে মোটা ব্যক্তিও খুব সহজে ওজন কমাতে পারবেন।

 

ইনফ্লুয়েঞ্জা: স্পেনের এক বিজ্ঞানী প্রমাণ করেছেন মধুতে এমন একটি প্রাকৃতিক উপদান আছে যা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসকে মেরে ফেলে এবং রোগীকে ফ্লু থেকে রক্ষা করে ।

 

খাঁটি মধু চেনার উপায়

পোকার কমড়ে: এক ভাগ মধু দুই ভাগ কুসুম গরম পানিতে দিয়ে তার সাথে ছোট চা চামচ দারুচিনিসহ খুব আস্তে ম্যাসেজ করলে দু এক মিনিটে ব্যথা চলে যায় ।

 

চুল পড়া: গোসলের আগে এক চা চামচ মধু ও এক চামচ গরম জয়তুন তেলের মিশ্রণ ১৫ মিনিট রাখলে চুল পড়া সমস্যা দূর করতে পারে ।

 

মূত্রথলির সংক্রমণঃ এক টেবিল চামচ দারুচিনির গুড়ার সাথে এক চা চামচ মধু এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে পান করলে মূত্রথলিতে বিদ্যমান জীবাণু ধ্বংস হয়ে যাবে ।

 

দাঁত ব্যথায়ঃ এক চা চামচ দারুচিনি গুড়া ৫ চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে দিনে তিন বার যন্ত্রণাময় দাঁতে প্রয়োগে ব্যথা চলে যায় ।

 

ঠাণ্ডা জনিত সমস্যা: যাদের সব সময় ঠাণ্ডা লেগেই থাকে তাদের ক্ষেত্রে এক চা চামচ কুসুম গরম মধুর সাথে এক চামচের চার ভাগের এক ভাগ দারুচিনি গুড়া প্রতিদিন সেবনে এ সমস্যার উপশম হয়।

 

বন্ধ্যাত্ব নিবারণে: ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিসিনে প্রাচীন কাল থেকে বন্ধ্যাত্ব নিবারণে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বীর্যকে শক্তিশালী করতে এবং সন্তান উৎপাদনে সক্ষম করে তুলতে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ২ টেবিল চামচ মধু খুবই কার্যকর। নারীদের গর্ভধারন ও জরায়ুর শক্তি বৃদ্ধি করতে মধু ও দারুচিনির গুড়ার ব্যবহার চীন জাপানসহ নানা দেশে প্রচলিত।

 

পেটের সমস্যায়: গ্যাস্ট্রাইসিসে মধু ও দারুচিনি গুড়ার কার্যকারিতা ভারত ও জাপানের গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও পেট ব্যথা ও আলসার উপশমে এগুলো দারুণ কর্যকর। 

 

বদহজম: দু টেবিল চামচ মধুতে দারুচিনি গুড়া ছিটিয়ে খাবারের আগে গ্রহণ করলে এসিডিটিসহ ভারী খাবার হজম হয়।

 

ব্রণ ও ত্বকের সমস্যায়: ব্রণের ক্ষেত্রে তিন টেবিল চামচ মধুতে এক চা চামচ দারুচিনি গুড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ঘুমাবার আগে ব্রণের উপর লাগিয়ে সকালে গরম পানি দিয়ে ধুলে দু সপ্তাহের মধ্যে মুখ থেকে ব্রণ মূলসহ দূরীভূত হয়। একজিমাসহ অন্যান্য ত্বকের সমস্যাও সমান অনুপাতে মধু ও দারুচিনি গুড়ার ব্যবহারে দূরীভূত হয়।

 

অবসাদ ও ক্লান্তিতে: সম পরিমাণ মধু ও দারুচিনি গুড়ার ব্যবহার শরীরকে সুস্থ, সজীব ও সতেজ রাখতে খুবই কার্যকর।

 

নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ: দক্ষিণ আমেরিকার অধিবাসীগণ সকালে গরম পানিতে ১ চা চামচ মধু ও দারুচিনি গুড়া মিশিয়ে গড়গড়া করে। এতে তাদের নিঃশ্বাস থাকে দুর্গন্ধবিহীন ও সজীব।

 

কানে কম শোনা: সকালে ও রাতে মধু ও দারুচিনি গুড়ার মিশ্রণ খেলে শ্রবণ শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।

 

ডায়াবেটিসে: মধুর মিষ্টতা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং তাদের বিভিন্ন প্রকার ক্ষত সারাতে এটি কার্যকর।

 
মধুর কার্যকারিতার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি

 

মধুর এন্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণাগুণ সর্বপ্রথম ব্যক্ত করেন ১৮৯২ সালে ভন কেটেল। ব্যাক্টেরিয়া বিরোধী মধুর এই কার্যকারিতার জন্য প্রধানত দুইটি জিনিস দায়ী। এগুলো হল হল মধুর অম্লতা ও মধুতে বিদ্যমান উচ্চমাত্রার চিনি। চিনির প্রভাবকে বলা হয় অসমোটিক প্রতিক্রিয়া ।

 

বৈজ্ঞানিকভাবে আরো একটি বিষয় প্রমাণিত যে, মধুর উপস্থিতিতে ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না। কারণ মধুতে থাকে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম যা ব্যাকটেরিয়ার বিদ্যমান জলীয় বাষ্প শোষণ করে ব্যাক্টেরিয়াকে মেরে ফেলে। মধুতে এনজাইমেটিক তৎপরতায় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড উৎপন্ন হয়।

 

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এবং এসিডিটি মধুতে যে বিক্রিয়া তৈরি করে তা হল:

 

গ্লুকোজ+পানি+অক্সিজেন->গ্লুকোনিক এসিড+হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। উপরোক্ত উপাদানসমূহ ছাড়াও বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা শনাক্তকৃত যে সব ফাইটোকেমিক্যাল এন্টিমাক্রাবিয়াল প্রতিক্রিয়া মধুতে রয়েছে পিনোসেমব্রিন, টারপিন, পিনাইল ও বেনজাইল যৌগ। ২০০৫ সালে নাইজেরিয়ার তা হল জার্নাল অব বায়েটেকনোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে দেখানো হয়েছে, ডায়রিয়ার জন্য দায়ী E. coli, Salmonerlla entrocolitis. Shigella dysenteriae প্রভৃতি ব্যাক্টোরিয়ার বিরুদ্ধে মধু দারুণ কার্যকর।

 

ফাইটোকেমিক্যালের উপস্থিতির জন্য মধু এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে বিবেচিত। শরীরের তরল পদার্থের প্রবাহকে সুন্দরভাবে বজায় রাখতে এবং শরীরে সকল কোষে বিশেষত মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহে কার্যকর।

 

ক্ষতে প্রলেপ হিসেবে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধক হিসেবে মধুর এন্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ ছাড়াও এটি রক্তে বি এবং টি লিম্ফোসাইটে ফ্যাক্টির আলফা, ইনটার লিউকিন-৬ প্রভৃতি নিঃসরণে সহায়তা করে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে সক্রিয় করে।

 

মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায়:

 

প্রাচীন কাল হতেই মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় প্রচলিত রয়েছে। মিশরের রানী ক্লিওপেট্টা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে মুখে নিয়মিত মধু মাখতেন। ময়েশ্চারাইজিং ও এন্টিবায়োটিক গুণের কারণে মধু সৌন্দর্য চর্চার অপরিহার্য উপাদান।  মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় সম্পর্কে বর্ণনা করা হলঃ


  • মুখমণ্ডল পরিষ্কার করে সামান্য মধু আঙ্গুলে লাগিয়ে সারা মুখে ও ঘাড়ে চক্রাকারে ম্যাসেজের কিছুক্ষণ পরেই মুখ ও ত্বক রক্ত চলাচলের গতি বেড়ে যাবে। এভাবে ২০-২৫ দিন মধু ব্যবহারে মুখমণ্ডল আগের চেয়ে সুশ্রী, সুন্দর লাবণ্যময়ী হয়ে উঠবে।

  • মুখে বয়সের ছাপ পড়লে দুধ ও মধু একত্রে মিশিয়ে পরিষ্কার মুখে মালিশ করে ২০ মিনিট রাখতে হবে। মিশ্রণটি তুলার সাহায্যে কপাল, গাল, ঠোঁটের উপরের স্থানে, থুতনী ও গলায় আলতোভাবে লাগাতে হবে। এভাবে ১৫-২০ দিন নিয়মিত লাগালে মুখে বয়সের ভাঁজ অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে।

  • ফেসিয়ালের এক কার্যকর উৎস মধু। ২-৩ চা চামচ মধু, পাঁচ চামচ ওটমিল ও এক চামচ পানি একত্রে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এরপর কাঁচা দুধে তুলো ভিজিয়ে মুখ ও ঘাড় মুছতে হবে যাতে বাড়তি তেল ও ময়লা না থাকে। এর ওপর উক্ত পেস্ট মুখ, গলা ও ঘাড়ে ভালোভাবে ম্যাসেজ করে লাগিয়ে চল্লিশ মিনিট পর কসুম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বক তেল তেলে হলে ওটমিলের বদলে শস্য ও লেবুর রস ব্যবহার করা যেতে পারে। 

  • হজম ঠিক মতো না হলে দেহের ত্বকে, চুলে, মুখে, মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে বিরূপ প্রভাব পড়ে। মধু ত্বকের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে। খাওয়ার পর মধু ও পানির মিশ্রণ খেলে বিপাক সমস্যাসহ চুল পড়া বন্ধ হবে এবং ত্বকে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়বে। 

  •       রোদে পোড়া মুখ, ঘাড়, গলা ও হাতের যত্নে মধু ও কমলালেবুর খোসা বাটা একত্রে মিশ্রিত করে আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করে মাখলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত এ মিশ্রণ মাখলে ত্বকের হারানো সৌন্দর্য ফিরে পাওয়া যায় ।


  •  শীতকালে ঠোঁট, হাত, পা ফেটে যায়। এসবের সমাধানে আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করে মধু মেখে আধা ঘন্টা রেখে দিলে উপকার পাওয়া যায়। দিনে দু একবার, সপ্তাহে দু তিন দিন এভাবে মালিশ করলে এ সব সমস্যা চলে যাবে।

  • শুষ্ক ত্বকের যত্ন কাঠ বাদাম ও গোলাপ ফুলের পাঁপড়ি বাটার সাথে মধু মিশ্রিত করে মুখ ও ঘাড়ে ত্রিশ মিনিট লাগিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। এভাবে মিশ্রণটি সংরক্ষণ করলে নিয়মিত ১৫-২০ দিন ব্যবহারে শুষ্কতা চলে যাবে।

  • ব্রণ হলে চুলকানীসহ ত্বকে কালো দাগ পড়ে। চন্দন বাটার সাথে মধুর মিশ্রণ মুখে মাখলে ব্রণসহ কালো দাগ দূর হবে।

  • চুলে খুশকির সমস্যায় লেবুর রসে মধু মিশ্রিত করে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করতে হবে। এভাবে ২০-৩০ মিনিট পর ভালো কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করতে হবে। ৫-৭ দিন নিয়মিত ব্যবহারে খুশকির সমস্যা সমাধান হবে।

 

সেক্সে মধুর উপকারিতা: 

 

সেক্সে মধুর উপকারিতা অনবদ্য। মধুকে সুপার ফুড বলা হয়। যে কোন ধরনের যৌন অসুবিধা ও পতিবদ্ধকতা মধুর মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব।  প্রাকৃতিকভাবে মধুতে রয়েছে ৪৫ টির উপর নিউক্লিয়া এসিড। এছাড়াও মধুতে রয়েছে শর্করা শতকরা ৮২.৪ গ্রাম, ভিটামিন, খনিজ লবন ও পানি (১৭.২%)।


এই সকল উপাদান থেকে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল উৎপাদিত হয় যা আমাদের সেক্স হরমনের লেভেল অনেক বাড়িয়ে দেয়। ফলে এটি নারী বা পুরুষকে সেক্স বা ইন্টারকোর্সে ব্যাপকভাবে আগ্রহী করে তোলে ।  সেক্স এর সময়কাল  বাড়ার পাশাপাশ এটি  দ্রুত পুনরায় মিলিত হওয়া কামনা বৃদ্ধিও করে। 

 

সেক্সে মধুর উপকারিতা প্রাপ্তির জন্য নিয়মমাফিক মধু পান করতে হবে।  ৩ (তিন) টি উপাদানের সাথে মধু খেলে সেক্সে মধুর উপকারিতা সর্বোচ্চ প্রাপ্তি হয়।  যথাঃ 

 

১।  কালোজিরা সাথে মধু

২।  রসুনের সাথে মধু 

৩।  দুধের সাথে মধু

 

মধু খাওয়ার নিয়মঃ নিম্নে মধু খাওয়ার নিয়ম আলোকপাত করা হলো। 

 

১।  কালোজিরার সাথে মধুঃ


১ (এক) চা চামচ কালোজিরার সাথে ১ (এক) চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে হবে। রাতে ঘুমানোর ৩০ মিনিটে পূর্বে এটি খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

 

২।  রসুনের সাথে মধুঃ

 

২(দুই) কোয়া রসুন ১ (এক) চা চামচ মধুর সাথে খেতে হবে মিশিয়ে চাবিয়ে খেতে হবে। এটি সকালে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায় । 

 

৩।  দুধের সাথে মধুঃ

                        

রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধের সাথে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এতে আপনার দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ হবে এবং যৌন সক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। 

 

খাঁটি মধু চেনার উপায়


বর্তমান বাজারে মধু অন্যতম একটি পণ্য। ফলে এর চাহিদা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি  ভেজালকারীর সংখ্যাও সমাহারে বেড়েছে।  নিম্নে ঘরোয়া ভাবে  খাঁটি মধু চেনার উপায় সমূহ আলোচনা করা হলো: 

 

১৷ মধু ঘন ও আঠালো: 

 

খাঁটি মধু চেনার প্রথম উপায় হচ্ছে মধুর  ঘনত্ব পরীক্ষা করা।  দুই আঙ্গুলে কিছু মধু জড়িয়ে নিন। এরপর দুই আঙ্গুল ঘর্ষণ করে পরীক্ষা করুন এটি ঘন  নাকি পাতলা, আঠালো নাকি কম আঠালো।  খাঁটি মধু ঘন ও আঠালো হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে বুঝবেন এটি খাঁটি  মধু নয়। 


২।  পানি  মধুর মিশ্রণ পরীক্ষা: 

 

মধু পানিতে দ্রবীভূত  বা মিশে যায় না। এক গ্লাস পরিষ্কার পানি নিন এবং এতে চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। যদি লক্ষ্য করেন মধু সম্পূর্ণরূপে পানিতে মিশে গেছে তবে বুঝবেন এটি খাঁটি মধু নয়। অন্যদিকে গ্লাসের উপরে যদি ছোট ছোট পিণ্ড লক্ষ্য করেন তবে বুঝবেন এটি খাঁটি মধু। 

 

খাঁটি মধু চেনার উপায়

৩।  মধুতে ফেনা: 

 

খাঁটি মধু চেনার উপায় এর মধ্যে ফেনা দেখে চিহ্নিত করা অন্যতম। একটিপরিষ্কার গ্লাসে কিছুটা পানি নিন। এতে দুই থেকে তিন চা চামচ ভিনেগার মিশ্রণ করুন। এরপর এতে এক চামচ মধু দিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ করুন। এই মিশ্রণের ফলে যদি কোন ফেনা উৎপন্ন হয় তবে বুঝবেন ভেজাল মধু। কেননা খাঁটি মধুতে কোন অবস্থায় ফেনা উৎপন্ন হয় না। 

 

৪।  মধুতে আগুন ধরানোর পরীক্ষা: 

 

খাঁটি মধুতে দ্রুত আগুন ধরে যায়। অন্যদিকে ভেজাল মধুতে  আগুন ধরতে সময় লাগে। একটি পাতলা কাপড় অথবা তোলা নিন। পরবর্তীতে খাঁটি  মধু ও ভেজাল মধু উভয়ের সাথে  কাপড় বা তোলা দুটো ভালোভাবে ভিজিয়ে নিন। পরবর্তীতে এতে আগুন ধরিয়ে দিন।  যে কাপড়ে দ্রুত আগুন ধরবে সেটি হচ্ছে খাঁটি মধু অন্যটি ভেজাল মধু। 

 

৫।  মধুতে চিনি জমা:

 

দীর্ঘ দিন মধু রেখে দিলে মধুর পাত্রের নিচের অংশে চিনি জমে, যেটা খুবি স্বাভাবিক ঘটনা।  পাত্র ভর্তি এই মধু হালকা গরম পানিতে কিছু সময় রেখে দিন। যদি এটি পূর্বের তরল রূপ ধারণ করে তবে সেটি খাঁটি  মধু এর ব্যতিক্রম ঘটলে সেটি ভেজাল মধু। 



৬।  ব্লটিং পোর পরীক্ষাঃ

 

একটি ব্লটিং পোরের উপর ৫(পাঁচ) ফোটা মধু দিন। যদি ব্লটিং পেপারটি সম্পূর্ণ মধু চুষে নেয়, তবে বুঝবেন এটি খাঁটি মধু নয়।

 

৭।  কাপড়ে মধু মাখনো পরীক্ষাঃ

 

মধু সাধারণত কোন কাপড়ে স্থয়ীভাবে রক্ষিত থাকেনা। এই পরীক্ষার জন্য আপনি এক টুকরো সাদা কাপড় নিন এবং সেটি মধু দিয়ে ভালোভাবে মাখিয়ে ১ ঘন্টা রেখে দিন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে কাপড় ধুয়ে ফেলুন। যদি মধুর দাগ থেকে যার তবে বুঝবেন এটি ভেজাল মধু, খাঁটি নয়।

 

লিঙ্গে মধু:

 

লিঙ্গে মধু মাখলে যেক্স কোন উপকার হবে কিনা এটা অনেকে জানতে চান। বৈজ্ঞানিকভাবে এটা প্রমাণিত যে, লিঙ্গে  মধু মাখলে যৌন জীবনে কোন উপকার হবেনা। মধুর প্রকৃত উপকার পেতে হলে অবশ্যই এটি খেতে হবে। 

 

যোনিতে মধুর ব্যবহারঃ

 

অনেকে যোনিতে মধুর ব্যবহার নিয়ে জানতে চান।  প্রাচীন বিভিন্ন সভ্যতায় যোনি পথে  মধুর ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায়।  প্রাচীনকালে যৌনি পথ পিচ্ছিল করার জন্য যোনিতে  মধু ব্যবহার করা হতো।  যে সকল রমণীর যোনিতে রস আসা বন্ধ হয়েছে অথবা  শারীরিক অন্য কোন সমস্যার কারণে রস আসতো না, তারা যৌন মিলনের পূর্বে যোনিতে মধু ব্যবহার করত। বর্তমানে যোনিতে ব্যবহারের জন্য নানান আধুনিক ঔষধ বাজারে প্রচলিত আছে।  তবে স্বাভাবিক অবস্থায় যোনিতে মধু ব্যবহার না করায় উত্তম।

 

রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা:

 

রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা বহুমুখী। রাতে ঘুমানোর ৩০ মিনিট পূর্বে হালকা গরম দুধের সাথে এক চা চামচ মধু মিশ্রণ করে পান করুন। মধুতে রয়েছে ৮২ দশমিক ৪ শতাংশ শর্করা যেখানে মহামূল্যবান ডেক্সট্রোজ ও লেভুলোজ নামে দুটো মনোস্যাকরাইড বিদ্যামান। এছাড়াও মধুতে রয়েছে খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি। এই সকল উপাদান শরীরের জন্য জরুরী ও উপকারী। রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে অন্যতম হলো ঘুম ভালো হওয়া এবং যৌন সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়া।  

 

ডায়াবেটিস হলে কি মধু খাওয়া যাবে? 

 

না।  ডায়াবেটিসের মাত্রা বেশি হলে মধু খাওয়া যাবেনা। মধুতে শর্করার পরিমাণ ৮২ দশমিক ৪ শতাংশ, যা রোগীর জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর।  তবে মাত্রা কম থাকলে খাওয়া যেতে পারে।

 

মধু নষ্ট হলে চেনার উপায় কি? 

                        

এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, মধু একটানা ৪০ বছর কোন পাত্রের মধ্যে রক্ষিত থাকলেও সেটি নষ্ট হয় না। এমনকি এর গুনাগুনও রক্ষিত থাকে। 

 
মধু খাওয়ার অপকারিতাঃ

 

মধু খাওয়ার অপকারিতা খুঁজে বের করা দুস্কর। মধু এমন একটি খাদ্যা যা শুধু ডায়বেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি বাদে সকলে গ্রহণ করতে পারে। অতএব বলা যায়, মধু খাওয়ার অপকারিতা নেই বললেই চলে।  

 

উপসংহার

 

চার হাজার বছর পূর্বে বেবিলনীয় সভ্যতায় প্রচলন ছিল যে, বিয়ের পর এক মাস শ্বশুর তার নতুন জামাইকে মধুর তৈরি বিয়ার খেতে দিবে যতটা সে খেতে পারবে। তখন এ মাসকে বলা হত মধু মাস যা আজকের দিনের হানিমুন। পীথাগোরাস মনে করতেন যে, শরীর ও মন একসূত্রে গাঁথা এবং এর একটির ভাল অপরটি ছাড়া সম্ভব নয়। 


কোন খাদ্যকেই ভাল বলা যাবে না যা শুধু একটির জন্য ভাল। প্লীনির মতে, মানসিক ব্যাকুলতা মিষ্টি পানীয় দ্বারা প্রশমিত হয় যা আরিক চেতনাকে করে শান্তিময়। প্রশ্বাসের পথকে করে সহজ ও সুন্দর এবং সুন্দর স্বভাব তৈরিতেও সাহায্য করে।   মধু হাজার হাজার ফুল ও ফলের নির্যাসে তৈরি। দুনিয়ার কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মধু তৈরি করা যাবে না।  আল্লাহতায়ালাই স্বীয় কৌশলে বান্দার জন্য সৃষ্টি করেছেন মধু। 


আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, তোমার প্রভু মৌমাছির অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ করেছেন বাসস্থান তৈরি কর পাহাড়ে, গাছে এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে । আহারের পর প্রত্যেক ফল থেকে আহার কর এবং তোমাদের প্রভুর তৈরি (তোমাদের জন্য) সহজ উপায় অনুসরণ কর। তাদের উদর হতে বের হয় বিভিন্ন রঙের পানীয় যার মধ্যে মানুষের শেফা ও রোগমুক্তি রয়েছে। 

অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে, চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা নাহল আয়াত: ৬৮-৬৯) আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর মাধ্যমে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে আমাদেরকে সুস্থতার যে পরশমণির সন্ধান দিয়েছেন, উন্নত বিশ্বের বহু গবেষণা ও পরীক্ষা দ্বারা স্বীকৃত ও সমাদৃত। সেই মহৌষধের দ্বারা আসুন আমরা উপকৃত হই এবং রোগ মুক্ত থাকি ।


তথ্য সূত্রঃ

বিশ্ব নবীর (সঃ) চিকিৎসা বিধান, ডাঃ একেএম শামীমূল আলম  

লোকমান হেকিমের হেকিমী চিকিৎসা, বিরাজ বৈদ্যনাথ সেন  


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন